নড়াইলে শিশু পরিবারের আট এতিমকে সংশোধনের জন্য দুই মাসের ছুটি


নড়াইল সরকারি শিশু পরিবারের এতিম নিবাসীরা তাদের ওপর কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের অভিযোগ করায় মাধ্যমিক পর্যায়ের আট নিবাসীকে সংশোধনের জন্য দুই মাসের ছুটি দেয়া হয়েছে। সোমবার (২৬ অক্টোবর) রাতেই তাদের ছুটি দেয়া হয়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নড়াইল সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসীরা সোমবার (২৬ অক্টোবর) সকালে তাদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন এবং বিভিন্ন দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে
শিশুরা অভিযোগ জানায়, তাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ প্রায়ই অসদাচরণ করে। অনেক সময় মারধর করে। তাদের খেলতে দেয়া হয় না, কিছু হলেই নাম কেটে দেয়ার ভয় দেখায়। ঠিক মতো চিকিৎসা দেয়া হয় না। এক কারিগরি প্রশিক্ষক প্রায় তাদের জন্য বরাদ্দকৃত বিস্কুট, মুড়ি, চানাচুর নিয়ে যায়। তাদের দিয়ে উপ-তত্ত্বাবধায়ক মাঝে মাঝে ঘরের মেঝে পরিষ্কার করায় এবং ময়লা ফেলায়। ডরমেটরিতে ৩০টি ফ্যানের মধ্যে সাতটি ফ্যান নষ্ট। অনেকগুলো আস্তে আস্তে ঘোরে। জগ নেই, গ্লাস নেই। রাতের খাবার দিয়ে গন্ধ বেরোয়।
সর্বশেষ গত রোববার (২৫ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে কর্তৃপক্ষের কাছে গলা ব্যথা, সর্দি-কাশিতে অসুস্থ সোহান সিকদারের চিকিৎসার দাবি করে তারা। পরে ২টার দিকে কর্তৃপক্ষ দুইজন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে কান ধরায় এবং চড়-থাপ্পড় মারে।
শিশুরা অভিযোগে করে, পুলিশ তাদের বলেছে- তোরা গাঁজা ও ফেনসিডিলখোর, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হবি। কখনও মানুষ হতে পারবি না। ছোট থেকে বড় সবাই তোরা খারাপ।
এদিকে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন শিশু পরিবারে গেলে কোনো নিবাসী সাংবাদকদের সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিবাসী বলে, সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন অভিযোগ করায় বড় ভাইদের চলে যেতে হয়েছে। আমরা কিছু বললে আমাদেরও চলে যেতে হবে। আমরা এখন ভালো আছি, আমাদের আর কোনো সমস্যা নেই।
সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুল্লাহ বলেন, সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা শিশু পরিবার সরেজমিনে পরিদর্শনের পর আটজনকে ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে শিশু পরিবারের নিবাসী তৌফিক, হাসিব গাজী, আরমান, আল মাহমুদ, শাকিল, রবি, জুবায়েরসহ আটজনকে দুই মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ দেয়ায় তাদের এ শাস্তি পেতে হলো কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা বেশ কিছুদিন ধরেই এ ধরনের আচরণ করছিল।
সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক রতন হালদার বলেন, শিশুরা সম্প্রতি বিভিন্ন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতো। গ্লাস, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করতো। শিক্ষকদের কথা ঠিক মতো শুনতো না। এজন্য আট শিশুকে সংশোধনের জন্য দুই মাসের ছুটি দেয়া হয়েছে। এসব শিশুদের অভিভাবকদের কাছে বুঝে দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ারুল ইসলাম জানান, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক এবং শিশু পরিবার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি আনজুমান আরা বলেন, শিশু পরিবারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু ঘাটতি রয়েছে। তাদেরকে সংশোধনের জন্য বলেছি। করোনাকালে শিশুরা খেলাধুলা করতে না পারায় মানসিকভাবে কিছুটা হতাশায় ভুগতে পারে। এখন তাদের বিনোদন এবং খাবারের চাহিদার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এছাড়া কিছু ছাত্র উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে, সংশোধনের জন্য তাদের মধ্যে আটজনকে দুই মাসের জন্য ছুটি দেয়া হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

বাংলাদেশে ‘এক কিডনির গ্রাম’, দালাল চক্রের ফাঁদে নিঃস্ব দরিদ্র মানুষ
বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বাইগুনি গ্রাম। নিজের অসম্পূর্ণ ইটের বাড়ির সামনেবিস্তারিত পড়ুন

যশোরের শার্শা উপজেলায় আপ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের শার্শা উপজেলায় আপ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে।বিস্তারিত পড়ুন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়া: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি নতুনবিস্তারিত পড়ুন