বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঘর হস্তান্তর করলেন প্রধান উপদেষ্টা


গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত গৃহ ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে হস্তান্তর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে প্রধান উপদেষ্টা তার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গৃহ হস্তান্তর করেন।
২০২৪ সালের ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। যেসব পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থাৎ যাদের ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নেই এ রকম ৩০০ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনঃনির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রধানের পেশা, আয়, ঘর নির্মাণে আর্থিক অসামর্থ্য, দুঃস্থতা, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধরন ও স্থানীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগী পরিবার বাছাই করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য এক বা একাধিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যৌথ জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
৩০০টি ঘরের মধ্যে ফেনী জেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলায় ৭০টি ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
ঘরগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় ও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহযোগিতায় দুটি ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়।
প্রতিটি ডিজাইনে ২টি মূল কক্ষসহ কমন স্পেস, টয়লেট, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। প্রথম ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৪৯২ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং দ্বিতীয় ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। উপকারভোগীদের নিজ বসতভিটার স্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোনো একজন উপকারভোগীর জন্য যেখানে যে ডিজাইন প্রযোজ্য হবে সেভাবেই গৃহগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
ঘরগুলো নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩০০টি ঘর নির্মাণে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে গৃহগুলোর নির্মাণ কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে।
তিনি বলেন, যারা বাড়ি পেয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছে সে সাহস সব সময় মনের মধ্যে ধারণ করবেন।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কাজে যারা নিরলস পরিশ্রম করে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন, বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সদস্যগণ, এলজিইডির প্রকৌশলীগণ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ; তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ।
প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি ছোট প্রকল্প। তিনশ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ভবিষ্যতেও এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে।
তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।
গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।
ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার চারজন উপকারভোগী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
