শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপট

সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপট

প্রফেসর মো. আবু নসর

মার্কিন কথা সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বলেছিলেন, প্রতিদিন দুটো করে সূর্য ওঠে। একটি প্রভাত সূর্য এবং অপরটি সংবাদপত্র সূর্য। প্রভাত সূর্যের চিরন্তন আলোয় সমগ্র জগত উদ্ভাসিত হয়। তেমনি সংবাদপত্র সূর্য বা সাংবাদিকতার কল্যাণে আমরা সমগ্র পৃথিবীর দৈনন্দিন ঘটনাবলীকে জানতে পারি। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার দায়িত্ব¡ প্রভাত সূর্যের মতোই চির ভাস্বর।

সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। এই স্তম্ভের দায়ভার প্রহণ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ অর্থবল থাকলেও নৈতিক মনোবল অনেকের থাকে না। সংবাদপত্রের ইতিবাচক ভূমিকা ছাড়া কোনো আন্দোলন বেগবান বা গতিশীল হয় না। সংবাদপত্রের ক্ষুরধার লেখনী, কলাম, প্রবন্ধ, নিবদ্ধ, প্রতিবেদন সংগ্রামী জনতাকে অধিকার সচেতন করে তোলে। তাই বাস্তবিকই সংবাদপত্রই জনতার শক্তি।

জনগণের স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংবাদপত্রের সম্মিলিত ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের সংবাদপত্র সর্বদা গণমুখী। বিভিন্ন প্রতিক‚লতার মধ্যেও সংবাদপত্রগুলো গণমানুষের কথা বলে। পত্রিকার গণমুখী, গণতন্ত্রমূখী ও ইতিবাচক ভূমিকা দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় ও সংবাদপত্রে গণমানুষের কণ্ঠস্বর জোরালোভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতন্ত্র, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে এ দেশের সংবাদপত্র সবসময় একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। সমাজের সমস্যা, সম্ভাবনা তুলে ধরে। এছাড়া সংবাদপত্র মানুষকে সারা বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় লাভের সুযোগ দান করে থাকে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিশেষ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সংবাদপত্র এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে আসছে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনায় সংবাদপত্র নির্ভিক ও সাহসিকতার সঙ্গে এক অবিস্মরণীয় ও চিরস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার পাশাপাশি দলীয় সাংবাদিকতাও বিরাজমান। সাংবাদিকদের নিজের বক্তব্য ও মতামত স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরে তা সংবাদপত্রে পরিবেশনের মাধ্যমে শক্ত অবস্থান নেয়া সাংবাদিকের ও স্বাধীন সংবাদপত্রের নীতি ও রীতি হওয়া উচিৎ। কারণ সংবাদপত্র কোনো দলীয় প্লাটফর্ম নয়। মালিক, সম্পাদক, লেখক ও পত্রিকার সব সাংবাদিকদের একটা নৈতিক মূল্যবোধ ও মানদÐ থাকতে হবে। স্বাধীন সংবাদপত্রের কাছেই পাঠকদের প্রকৃত ও প্রধান প্রত্যাশা। দেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে স্বাধীন সংবাদপত্র অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ। সাংবাদিকরা জাতির বিবেকের ব্যারোমিটার। তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে সংবাদপত্রের সব প্রতিবেদন সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। আর একজন সাংবাদিক হচ্ছে ‘দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের মতো’। একজন সাংবাদিক সমাজের প্রতিচ্ছবি, তাদের গণমানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে। সাংবাদিক হতে হলে তার প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
যে ঘটনা, ভাব বা বিষয় সংবাদের মাপকাঠিতে প্রণিধানযোগ্য, তাই সংবাদ। অন্য কথায়, সংবাদ হলো সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো সময়োপযোগী প্রতিবেদন। সংবাদের বৈশিষ্ট্য হবে সত্যনিষ্ঠ বা সত্যনির্ভর, যথার্থ, সহজ-সরল, সংক্ষিপ্ত, সুষম, বস্তুনিষ্ঠ, আপেক্ষিক ও রুচিশীল।

ইংরেজিতে জার্নালিজম শব্দ থেকে সাংবাদিকতা কথাটি এসেছে। এই জার্নালিজম হলো জার্নাল ও ইজম এ দুটো শব্দের সমন্বিত রূপ। জার্নাল অর্থাৎ কোনো কিছু প্রকাশ করা, অন্য অর্থে দিনপঞ্জি এবং ইজম অর্থাৎ অভ্যাস বা অনুশীলন বা চর্চা। সম্পূর্ণ অর্থে দিনপঞ্জির অনুশীলন।

সাংবাদিকতার আদি রূপটি প্রবর্তিত হয়েছিল জুলিয়াস সিজারের আমলে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ সালে। সেসময় ইতালির রোমে একধরণের ব্যক্তিরা সংবাদ লেখক হিসেবে কাজ করতো। তারা স¤্রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রাত্যহিক দিনলিপি সংগ্রহ করতো। যেটা আজকের যুগে প্রাচীরপত্রের মতো। পনেরো শতকে লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার হলেও ষোড়শ শতকেও ভেনিস শহর থেকে হাতে লেখা প্রাচীরপত্র প্রকাশিত হতো। মধ্যযুগে ভারত বর্ষেও হাতে লেখা সংবাদপত্রের কথা জানা যায়। মোঘল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে কাফী খাঁন নামের একজন পন্ডিত তার ‘মুন্তা খাবুল লুবার’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘শিবাজীর বাড়ির জনৈক রাজারামের মৃত্যুসহ অন্যান্য খবর স¤্রাটের শিবিরে পৌছে দিয়েছিলো হাতে লেখা সংবাদপত্রের মাধ্যমেই…’। এ থেকে অনুমান করা যায় ওই পত্রিকাটি ভারতবর্ষের প্রাচীন হাতে লেখা সংবাদপত্র।
মার্গারিটা বার্নাসের ‘দ্যা ইন্ডিয়ান প্রেস’ গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়- বাদশা আওরঙ্গজেবের সময় সাধারণ সৈন্যদের মাঝে সংবাদপত্র বিলি করা হতো। মধ্যযুগেও ভারতবর্ষে হাতে লেখা সংবাদপত্র ছিলো, সেগুলোর সঙ্গে পেশাদার সংবাদদাতারা যুক্ত ছিলেন। ১৮২৮ সালে কর্নেল জেমস টড মুঘল দরবারে কয়েকশ হাতে লেখা সংবাদপত্র হস্তগত করে তা লন্ডনের এশিয়াটিক সোসাইটিতে পাঠাতেন। সেইসব কাগজ লম্বায় ৮ইঞ্চি এবং চওড়ায় সাড়ে ৪ইঞ্চি ছিলো। তবে উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলা ভাষী অঞ্চলে সাংবাদিকতা বৃত্তির উন্মোচনে মুঘল স¤্রাটদের ভূমিকা ছিলো অনন্য।
মাঝে একটি দীর্ঘ বিরতির পর ১৭৮০ সালে এ অঞ্চলে মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রথম যাত্রা শুরু হয়।

বৃটিশপূর্ব ভারতের সংবাদপত্রের নজির বলতে মোঘলদের রাজকীয় ফরমানের সংকলক ‘ওয়াকিয়া নবি’ (ডধয়ঁরধয ঘধারবং) ব্যতীত আর কোন আবিস্কার এখনও করতে পারেন নি পÐিতকুল।

ভারতীয় উপমহাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের সূচনা হয় পলাশী যুদ্ধের মাত্র ১১ বছর পর ১৭৬৮ সালে।
১৭৮০ সালে কলকাতা থেকে প্রবাসী ইংরেজ জেমস অগাস্টাস হিকির প্রকাশিত প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্রটি হিকির গেজেট’ নামে পরিচিত ছিল। প্রকৃতপক্ষে পত্রিকাটির নাম ছিল ‘বেঙ্গল গেজেট’ বা ক্যালকাটা জেনারেল অ্যাডভাইজার। পত্রিকাটি অল্পদিনেই বাজেয়াপ্ত করেন লর্ড হেস্টিংস।
এরপর উইলিয়াম ডান ‘বেঙ্গল জার্নাল’ প্রকাশ করে অচিরেই ভারত ত্যাগে বাধ্য হন। তার উত্তরসূরী ‘বেঙ্গল হারকরা’ পত্রিকার প্রকাশক ডক্টর চার্লস ম্যাকলিয়ানকেও ভারত ত্যাগে বাধ্য করেন গর্ভনর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি। তিনি সংবাদপত্রের উপর ১৭৯৯ সালে সেন্সরশিপ আরোপ করেন। এর আগে ১৭৬৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কর্মচারী উলিয়াম বোন্টস চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানির লোকেরা সম্ভাব্য বিপদের গন্ধ পেয়ে বোন্টস সাহেবকে জাহাজে করে তার নিজ দেশে পাঠিয়ে দেন। রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় রোমান ক্যাথলিক চার্চের পক্ষে একজনকে প্যামলেট লেখার দায়ে তাকে ফাঁসিতে লটকানো হয়। উইলিয়াম প্রাইম নামের এক মুদ্রক-প্রকাশককে রাজোদ্রোহের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।
এই বিদেশিদের হাতেই সংবাদপত্র প্রকাশ, প্রচারের যেমন হাতেখড়ি তেমনি নিয়ন্ত্রণেরও সূত্রপাত। ব্রিটিশরা উপনিবেশ ছেড়ে চলে গেলেও বস্তুত ঔপনিবেশিক দাসত্ববোধ এখনো রয়ে গেছে।
তবে এ কথাও সত্য যে, ইউরোপিয়ানরাই এ উপমহাদেশে আধুনিক সংবাপত্র ও সাংবাদিকতার জন্ম দিয়েছেন। বিশেষ করে ১৮১৮ সাল থেকে ১৮২১ সাল ছিল এ অঞ্চলের সাংবাদিকতার ইতিহাসের এক যুগান্তকারী অধ্যায়।

১৭৮০ সালে অবিভক্ত বাংলা তথা ভারতবর্ষে মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রথম প্রকাশনা শুরু হলেও এর ৭৮ বছর আগে ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশনার কাজ শুরু হয়। ১৭০২ সালের ১১ মার্চ এডওয়ার্ড ম্যালেটা কর্তৃক প্রকাশিত বৃটেনের প্রথম দৈনিক পত্রিকাটির নাম ছিল ‘ডেইলি কুর‌্যান্ট’। চীন দেশের অভিযাত শ্রেনীর মধ্যে সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয় বলেও জানা যায়। জনশ্রæতি আছে ইউরোপের ভেনিস শহরে প্রথম সংবাদপত্র মুদ্রিত হয়েছিল। আমাদের দেশে ইংরেজ পাদ্রীরা খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৮১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে ‘সমাচার দর্পণ’ নামে প্রথম সংবাদপত্র বাংলা ভাষায় মুদ্রিত করে প্রকাশ করেন। পরে ‘দিকদর্শন’, রাজা রামমোহন রায়ের ‘সংবাদ কৌমুদী’, কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ প্রকাশিত হয়। ১৮১৮ সালের ১৬ মে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের মালিকানাধীন পত্রিকা ‘বাঙ্গাল গেজেট’ মূলত বাঙালি শিক্ষকদের সম্পদনায় প্রকাশিত হয়।
উনিশ শতকের গোড়ার দিক থেকে আমাদের দেশে সংবাদপত্রের ব্যাপকতা লাভ করে।

লেখক:

 

প্রফেসর মো. আবু নসর
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,
কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা।

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসরবিস্তারিত পড়ুন

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবুবিস্তারিত পড়ুন

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত প্রফেসর মো. আবু নসর ৫২’রবিস্তারিত পড়ুন

  • পবিত্র মিরাজের শিক্ষা স্রষ্টার ইবাদত ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
  • সাতক্ষীরার প্রথম মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ
  • বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী আশুরা
  • জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি: চীনকে ছাড়িয়ে ভারত
  • ঈদুল আযহা : ঐতিহাসিক ত্যাগের মহান স্মরণিকা
  • শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ের দিন ‘মে দিবস’
  • বরকতময় পবিত্র শবে বরাত
  • ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মূল চালিকা শক্তি
  • চেতনায় ’৭১: মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়া
  • ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া হানাদারমুক্ত দিবস প্রফেসর মো. আবু নসর
  • সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী (সাঃ)
  • আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি-ই হলো কোরবানি