প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
সাতক্ষীরায় লকডাউনেও সড়কে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজী!
তারা সরকারি, আইনশৃংখলা কিংবা বিআরটিএ এর কোন আধিকারিক নন। সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বেও না। তবে তারা কোন আইনের তোয়াক্কা করেন না। রাস্তায় পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি চালাতে গেলে তাদের টাকা দিতে হবে। নিজের পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের নামে তোলেন সেই টাকা। উত্তোলিত টাকা কোন খাতে খরচ হয় সেটাও জানেন না। তবু চাঁদা উত্তোলনই তাদের পেশা-নেশা। চাঁদাবাজীর পাশাপাশি লাঠি হাতে প্রকাশ্যে রাস্তায় দেখা যায় ওই সকল ব্যক্তিদের। তারাই যানবাহনের রুট ঠিক করে দেন। এর ব্যতয় হলে লাঠির আঘাত, গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়া, গাড়ি আটকে রাখাসহ নানান হয়রানী করা হয়। এমনই সড়ক চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে নাজেহাল সাধারণ চালক ও গাড়ির মালিকরা।
সাতক্ষীরায় চলমান লকডাউনেও সড়কে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে জোরপূর্বক চাঁদাবাজীর অভিযোগ উঠেছে। মহাসড়কের ট্রাকের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানীয় সড়কে ইজিবাইক-মহেন্দ্র থেকেও চাঁদা আদায়ের দৃশ্য দেখা গেছে।
লকডাউনের আগেও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক, সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রাক, ঢাকাগামী পরিবহন, মহেন্দ্র, ইজিবাইক সহ অন্যান্য বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক বিভিন্ন অংকের টাকা আদায় করা হতো। সাথে থাকতো দুর্ব্যবহারও। করোনার প্রেক্ষিতে লকডাউনের মধ্যে যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকলেও ট্রাক চলছে। স্বল্প পরিসরে চলছে মহেন্দ্র-ইজিবাইক, নছিমন-করিমন। তবে থেমে নেই চাঁদাবাজী।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন। এর মাঝেও সাতক্ষীরায় ‘সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার নামে’ প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে ভোমরা’র গাংনিয়া ব্রিজের উপর সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী, ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিনের নামে জোরপূর্বক অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
ভোমরা’র গাংনিয়া ব্রিজের পাশে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘স্লিপের মাধ্যমে ট্রাংক, গরুবহনকারী ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমন, আলমসাধু ও মালামাল বহনকারী যানবাহন প্রতি ৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এসময় ট্রাক থমিয়ে চাঁদা আদায়ের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক দেখে চাঁদা আদায়কারীরা সেখান থেকে দ্রুত সরে পড়েন এবং ট্রাক ড্রাইভারদের ইশারা করে চলে যেতে বলেন।’
ঐ স্পটে সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে থাকায় তাদের চাঁদা আদায়ে বিঘ্ন ঘটে।
এসময় ট্রাক ড্রাইভারদের বক্তব্য নিতে গেলে চাঁদা আদায়কারীদের দ্বারা সড়কে হয়রানী, ঝামেলা ও চাকুরী হারানোর ভয়ে অনেক ড্রাইভার বক্তব্য দিতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানায়।
পরে ট্রাকের নম্বর ও নাম উল্লেখ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রাক ড্রাইভার জানান, ‘প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী, ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিনের নামে ৩০+৩০ মোট ৬০ টাকা করে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাকসহ বিভিন্ন মালবাহী যানবাহন থামিয়ে জোর পূর্বক অবৈধভাবে ঐ চাঁদা আদায় করা হয়। যে কারণে সড়কে অনেক সময় যানজট লেগে থাকে এবং সড়ক দূঘর্টনা ঘটে। সময় নষ্ট তো আছেই। নির্দিষ্ট সময়ে যানবাহনের মাধ্যমে মালামাল পৌছাতে পারিনা। তবে এই টাকা যাচ্ছে কোথায় তা আমরা জানি না।’
ভোমরার গাংনিয়া ব্রিজের উপর সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী, ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিনের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাহাঙ্গীর হোসেন শাহীন’র নেতৃত্বে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজী করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
তারা আরো জানান, ‘করোনা মহামারীর মধ্যেও আমাদের ট্রাংক শ্রমিকদের কোন সহায়তা করা হয়নি। যাদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করা হয়েছে তাদের কল্যাণে কোনদিন এই অর্থ ব্যয় করা হয়নি।’
অপরদিকে, জেলার ৭টি উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়ক ও বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের সড়কেও অনুরূপভাবে মহেন্দ্র, ইজিবাইক, মোটরভ্যান থেকে কতিপয় ব্যক্তিরা বিভিন্ন অংকের চাঁদা আদায় করে থাকেন।
কলারোয়া উপজেলার বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল রোড, সোনাবাড়িয়া, চন্দনপুর কলেজ মোড়, সরসকাটি, বালিয়াডাঙ্গা, খোরদোসহ বিভিন্ন স্পটেও কতিপয় ব্যক্তিরা ওই সকল যানবাহন থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তবে সেই টাকা যায় কোথায় সেটা অনেকটা থাকে অজ্ঞাত।
ঐ অবৈধ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং অবিলম্বে চাঁদাবাজী বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছে সাধারণ ব্যবসায়ী ও চালকরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)