সাতক্ষীরায় ৫ দফা দাবিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির গণঅবস্থান


‘‘গরীবদের বাঁচাও, দুনিয়ার মজদুর এক হও, শ্রমিকশ্রেণীসহ শোষিত-নিপীড়িত শ্রেণীকে মুক্ত কর’’ এই স্লোগান হৃদয়ে লালনের মাধ্যমে বিদ্যমান ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, নৈরাজ্যিক ও অনিশ্চিত সংকটময়’ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের কৌশল পরিহার করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাগরিকের অধিকার ফিরে এনে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান কায়েমের জন্য ৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীরা জেলা শাখার গণঅবস্থান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৬/১১/২০২১) সকাল ১১ টায় খুলনা রোড মোড়ে এ গণঅবস্থান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব মুনসুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সাতক্ষীরার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে সড়কের ধারে ভাসমান দোকান বানিয়ে ব্যবসা করতে পারে না। এছাড়াও সড়কে চলাচলরত মাহিন্দ্রা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, মটরসাইকেল ও ভ্যানচালকদের হয়রানি বন্ধ হয়নি। অদ্যবধি সাতক্ষীরায় কোনো হর্কাস মাকের্ট, সিনে কমপ্লেক্স, কসাইখানা নির্মাণ, সুলতানপুর বড় বাজার সম্প্রসারণ এবং গ্রাম-শহরের গরীবদের জন্য হয়নি রেশন ব্যবস্থা চালু। যার ফলে বছরে কয়েক মাস পর পর ভাসমান দোকান উচ্ছেদের পরে ওই দোকানের মালিকদের স্ত্রী-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। তারাও তো এই দেশের মানুষ। এই দেশের মাটিতে ব্যবসা করে খাওয়ার অধিকার রয়েছে। অথচ বারবার তাদের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার পায়তারা করে কতিপয় প্রভাবশালীদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। ওই ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করলে তারা পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে বাধ্য। তাই মানবিক দৃষ্টিতে তাদের কথা ভেবে যানজট নিরসনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের পুর্নবাসন করতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি আরও বলেন, গড়ে সাড়ে ৪ জনের এক একটি পরিবার ডাইরেক্ট-ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সের মাধ্যমে পরিশোধ করি বছরে দেড় লাখ টাকা করে। এই টাকা তারা নেয় আমদের সেবা করার নামে। কি সেবা তারা করে? এখন সড়কের ধারের ফুটপাতে ভাসমান চায়ের দোকানদারীও করতে পারছে না শ্রমিকরা। এর জন্য স্থানীয় প্রশাসন কি দায়ী নয়? সরকারের মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধিদের কোন দায় নেই, তাদের কাজ কি? সে কার কাছে দায়বদ্ধ ,তাকে মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি বানাইছে কে? তাদের মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি রাখছে কে? আমরা জানি তারে মন্ত্রী বানাইছে প্রধানমন্ত্রী, সে দায়বদ্ধ প্রধানমন্ত্রীর কাছেই। সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই এই ক্ষমতা দিয়া রাখছে। তো প্রধানমন্ত্রী দায়বদ্ধ কার কাছে? তারে জিগাইবো কেডা? তার কাছ থেকে হিসাব নিবে কে? এই জবাবদিহিতার কোন আইন, কোন ব্যবস্থা, কোন প্রকল্প, বাংলাদেশের সংবিধানে নেই, রাজনীতিতেও নাই, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ও নাই। নাই যে তার বোধও নাই। এটাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা। আপনার আমার টাকায় রাস্তা সংস্কার হয়, মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ী কিনা হয়। আমরা যে টাকা দেই সেই টাকা খরচ করা হয় পুলিশের পিছনে, অস্ত্র ও গুলিগালা কিনার জন্য, যাতে এইসব প্রশ্ন করতে রাস্তায় নামলে আমাদের সন্তানদের পেটানো যায়, গ্রেপ্তার করা যায়, জেলেপুরা যায়। এভাবে গরীব, দরিদ্র, শোষিত শ্রেণিকে বহুবিধ পন্থায় ভাতে মারবার জন্য সরকারকে বিনা প্রশ্নে টাকার যোগান দিয়ে যাবেন নাকি এই রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা ঠিকঠাক করে জাবাদিহিতার আওতায় অনার জন্য নতুনভাবে ভাববেন, নতুন কাজ শুরু করবেন সেটা ঠিক করুন। আমরা এই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য পথে আছি। আপনাদের পাশে আছি।
মুনসুর রহমান বলেন, মাহিন্দ্র, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, ভ্যান, ব্যাটারি, রিকশা, পার্টস সহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি বৈধ প্রক্রিয়ায় কিনে ইজিবাইক -ব্যাটারি রিকশা তৈরী করে রাস্তায় চালাতে গেলে অবৈধ বলে হয়রানি-উচ্ছেদ করা দুঃখজনক। অবিলম্বে নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক লাইসেন্স প্রদান, হয়রানি ও উচ্ছেদ বন্ধ করুন।
মুনসুর আরও বলেন, জেলায় হাজার হাজার কিলোমিটার কাঁচা-পাকা অলি-গলি রাস্তা রয়েছে। ওই রাস্তাগুলোর অধিকাংশ সুরু ক্যানেলে পরিণত। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে এ্যাম্বলুন্সে করে ওই রাস্তা দিয়ে হসপিটালে নেওয়া যায় না। এছাড়াও আজ সরকারকে কৃষিবান্ধব ঘোষণা করছে অনেকে। অথচ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য ও খেতমজুরদের সারা বছর কাজের অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমনকি শিক্ষা, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা প্রভৃতি সেবামূলক খাতের বাণিজ্যিকীকরণের জন্য সর্বশ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ শ্রেণি-পেশার মানুষ। এটি বন্ধ করে গণমুখী নীতি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন, পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিতকরণ, বেতনা নদী ও প্রাণসায়ের খালসহ সকল নদী-খাল পুনঃখনন, সুপেয় পানির উৎস্য পুরুদ্ধার, জলাবদ্ধতার কবল থেকে সকল নাগরিকদের মুক্ত করা, সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান এবং মফস্বলে সংবাদপত্রের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি সংবিধান থেকে সকল অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বিদ্বেষী সংশোধনী বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা জরুরী বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া বক্তব্য রাখেন মো. বায়েজীদ হাসান, হোসেন আলী, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল কালাম প্রমূখ। এ সময় ভূমিহীন নেতা আকবর আলী, ভাসমান দোকানদার শেফালী, রাশিদা, বাপ্পি, লিটন, রেজাউল, লুৎফর, কবিতা, নাজমুল, বেল্লাল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
বি.দ্র: দাবিগুলো হলো-
১. সাতক্ষীরার অলি-গলি রাস্তা প্রশস্তকরণ, সড়কের ধারের ভাসমান দোকান উচ্ছেদ প্রচেষ্টা বন্ধ করে আধুনিকমানের হর্কাস মাকের্ট, সিনে কমপ্লেক্স, কসাইখানা নির্মাণ, সুলতানপুর বড় বাজার সম্প্রসারণ ও গ্রাম-শহরের গরিবদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু কর।
২. সড়কে চলাচলরত মাহিন্দ্রা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, মটরসাইকেল ও ভ্যানচালকদের হয়রানি বন্ধ কর।
৩. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের পাশাপাশি খেতমজুরদের সারা বছর কাজের অধিকার নিশ্চিতকরণ, বেতনা নদী ও প্রাণসায়ের খালসহ সকল নদী-খাল পুনঃখনন, সুপেয় পানির উৎস্য পুরুদ্ধার, জলাবদ্ধতার কবল থেকে সকল নাগরিকদের মুক্ত কর।
৪. শিক্ষা, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা প্রভৃতি সেবামূলক খাতের বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করে গণমুখী নীতি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন, পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করণ, সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান এবং মফস্বলে সংবাদপত্রের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন কর।
৫. সংবিধান থেকে সকল অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বিদ্বেষী সংশোধনী বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যেমে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলো।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
