১২ বছরের বেশি বয়স হলে নিবন্ধন ছাড়াই টিকা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় যাদের বয়স ১২ বছর পার হয়েছে তাদেরকে নিবন্ধন ছাড়াই টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন সংযুক্ত ক্রিটিক্যাল কেয়ার, ডায়ালাইসিস ইউনিট ও অক্সিজেন প্ল্যান্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৭ কোটির বেশি টিকা আমরা দিয়েছি। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছে ১০ কোটির বেশি মানুষ। আমাদের হাতে ১০ কোটি ডোজ টিকা আছে, কিন্তু অনেকে টিকা নেননি। এ কারণে ১২ বছরের বেশি বয়সীরা জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন না থাকলেও শুধু নাম, বয়স ও মোবাইল নম্বর দিয়ে টিকা নিতে পারবে।’
ভ্যাক্সিন প্রদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এখনো অনেকেই ভ্যাক্সিন নেননি বা নিতে চাচ্ছেন না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে বর্তমানে কোভিডে মৃত্যুর ৮৫ ভাগ মানুষই নন ভ্যাক্সিনেটেড। আক্রান্তেও নন ভ্যাক্সিনেটেড মানুষ শীর্ষে। দেশ কোভিডে এত ভালো করেছে ভালো চিকিৎসা সেবা ও সময় মতো ভ্যাক্সিনেশন কাজ করার কারণেই। এজন্য ভ্যাক্সিন নিতে দেশের অবশিষ্ট মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি সভ্য জাতি বলেই দেশের এত বিশাল সংখ্যক মানুষ এত স্বল্প সময়েই ভ্যাক্সিন গ্রহন করেছে। আগামীতেও বাংলাদেশ সভ্যতার নজির স্থাপন করবে এবং কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল হবে।
এসময় তিনি বলেন, ‘ডায়ালাইসিস নিয়ে যে সংকট ছিল, তা পেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। কয়েক দিন আগে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এগুলো ভুল। যে সংবাদ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবিলায় গোটা বিশ্ব যেখানে টালমাটাল অবস্থায় আছে সেখানে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স এ ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে, দেশে খাদ্য সংকট হয়নি, মানুষ কোথাও না খেয়ে থাকেনি, দেশের পদ্মাসেতু বাস্তবায়নসহ সকল মেগা প্রজেক্টের কাজ পুরোদমে চলছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি না কমে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, চারটি নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ২০টি নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে, দেশের সকল জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ বেড ও ১০ বেডের ডায়ালাইসিস বেড করার কাজ এগিয়ে চলাসহ বর্তমান সরকারের উন্নয়নকাজগুলি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্যখাতের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সফলতার কারণেই গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি মানুষ বা দেশের ৮৫ ভাগ মানুষকে ভ্যাক্সিন দিতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আফ্রিকার দেশগুলিতে মাত্র ১২ ভাগ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। একারণে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে বেশি কাজের সুযোগ পাচ্ছে, ব্যবসার ঊর্ধ্বগতি লাভ করেছে, দেশের অর্থনীতির চাকা চাঙা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বেড বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই হাসপাতালে আগে বেড ছিল ৮০০টি। আমরা এটিকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে এখন সাড়ে ১৩’শ বেড করেছি। নতুন আরও ২৪০ বেড বৃদ্ধির কাজ চলমান রয়েছে। আজকেই দেশের কুর্মিটোলা, মুগদা, মিটফোর্ড হাসপাতালের সঙ্গে একযোগে আরও ১২৬টি নতুন ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হলো। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উন্নত বিশ্বের হাসপাতালের ন্যায় নতুন ২০টি বেড স্থাপন করা হলো। একইসঙ্গে, ঢাকার হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ৮ বিভাগে ৮টি ১৫ তলা বিশিষ্ট সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মানের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। আমরা চাচ্ছি ঢাকার মানের সেবা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দিতে। এজন্য জেলা হাসপাতালে দ্বিগুণ বেড বৃদ্ধিসহ মফস্বল এলাকায় চিকিৎসা সেবা পৌছে দিতে ১৪ হাজার ১৫৬টি কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছে। এগুলো থেকে দিনে ৯ লাখেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন যা চিকিৎসা সেবায় বর্তমান সরকারের ডিসেন্ট্রালাইজেশন চিন্তার ফসল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ঢাকার মানের চিকিৎসা সেবা এখন বিভাগীয় শহর থেকে দিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের চেষ্টা থাকবে দ্রুততার সঙ্গে দেশের প্রান্তিক মানুষকে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা। সে অনুযায়ী এই করোনাকালেও স্বাস্থ্যখাতে ৪০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম খুরশিদ আলম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর আহমেদুল কবীরসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)