বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

৬ ডিসেম্বর কলারোয়া মুক্ত দিবস

৭১ এর ৬ ডিসেম্বর সোমবার আগুনঝরা এই দিনে কলারোয়া এলাকা পাকহানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। কলারোয়ার আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্তিকামী মানুষের আনন্দ উল্লাসে মুখোরিত হয় পাক বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ক্ষতবিক্ষত কলারোয়া।

৬ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে ৯মাস সশস্ত্র সংগ্রাম, বহু আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে এই দিনে কলারোয়া পাক হানাদারমুক্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ায় ২৭ জন অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কলারোয়া অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উজ্জ্বীবিত করতে কলারোয়া হানাদার মুক্ত দিবসের ইতিহাস নি:সন্দেহে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়া ছিলো ৮নং সেক্টরের অধীন। ৮নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী। ৭১’র জুলাই মাসের শেষের দিকে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পান মেজর আবুল মঞ্জুর। সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন (এক মাস), ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন বীর বিক্রম (দুই মাস), ক্যাপ্টেন তৌফিক এলাহী ও শফিউল্লাহ বীর প্রতীক।

প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ প্রাক্তন এমসিএ মমতাজ আহমদ (প্রয়াত) আঞ্চলিক স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এবং প্রবাসী সরকারের ৮নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। সংগ্রাম পরিষদের সেক্রেটারি ছিলেন দেশবরেণ্য শিক্ষক নেতা ও ভাষা সৈনিক শেখ আমানুল্লাহ (প্রয়াত)। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বিএম নজরুল ইসলাম, মোসলেম উদ্দীন (প্রয়াত), হোসেন আলী (প্রয়াত), ডা.আহমদ হোসেন খাঁন (প্রয়াত), বাবু শ্যামাপদ শেঠ (প্রয়াত), এসএম এন্তাজ আলী (প্রয়াত), তারক নাথ ঘোষ (প্রয়াত), এমএ করিম প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রকাশ থাকে যে, মমতাজ আহমদ ৮নং সেক্টরে রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার পর বিএম নজরুল ইসলাম সংগ্রাম পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পান।

স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে কলারোয়া থানার সর্বত্র সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে প্রয়াত মোসলেম উদ্দীন (পরবর্তীতে যুদ্ধকালীন কমান্ডার), আব্দুল গফফার, আব্দুর রউফ, হাবিবুর রহমান (প্রয়াত), আবুল হোসেন (১), সৈয়দ আলী গাজী, আবুল হোসেন (২), আবু বকর, গোলাম মোস্তফা, জাকারিয়া (প্রয়াত), কেঁড়াগাছি গ্রামের প্রয়াত আতিয়ার রহমানসহ অনেকের নাম বার বার উঠে আসে। পরে অবশ্য কলারোয়া থানা থেকে তৎকালীন ৩৪৩ জন দামাল ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁদের অসীম বীরত্বের পরিচয় জাতি শ্রদ্ধার সাথে আজো স্মরণ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মোসলেম উদ্দীন (প্রয়াত) ও আব্দুর গফফার দু’জন যুদ্ধকালীন সময়ে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল কলারোয়ায় পাকহানাদার বাহিনীর প্রথম আগমন ঘটে।

ইতিহাসে কলারোয়ার প্রথম শহীদ মাহমুদপুর গ্রামের গাজী আফসার উদ্দীন। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন তিনি।
পরপরই পাক হানাদাররা আক্রমন করে কলারোয়ার মুরারীকাটি গ্রামের পালপাড়ায় গণহত্যা চালায়। ওই হত্যাকন্ডে বৈদ্যনাথ পাল, নিতাই চন্দ্র পাল, রঞ্জন পাল, বিমল পালসহ ৯জন নিরপরাধ কুম্ভকার শহীদ হন। এরপর বামনখালীর ঘোষপাড়ায় রাজ কুমার ও খগেন ঘোষকে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা।

৯মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কলারোয়ায় পাক বাহিনীর সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয় ৬টি স্থানে। স্থানগুলোর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গা-হঠাৎগঞ্জ, কাকডাঙ্গা, মাদরা, সোনাবাড়িয়া, হিজলদী, নাথপুর ও পার্শ্ববর্তী শার্শার বাগআঁচড়া উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্মের সাথে যুদ্ধ করে পাকবাহিনীকে পরাস্থ করেন। এছাড়াও আরো কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমন করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

৩ সেপ্টেম্বর বালিয়াডাঙ্গায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল মুখোমুখি যুদ্ধে ৭/৮জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ওই যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা কলারোয়ার বৈদ্যপুরের জাকারিয়া, বাগাডাঙ্গার ইমাদুল, ই.বি রেজিমেন্টের লুৎফর রহমান ও শফিক চৌধুরী শহীদ হন।

১৭ সেপ্টেম্বর কাকডাঙ্গায় ফের সম্মুখ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে ১৭জন পাকসেনা নিহত হয় আর বাকিরা কাকডাঙ্গা ছেড়ে দমদমায় অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে নাকিলা গ্রামের হাফিজসহ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

১৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎগঞ্জ থেকে পাকসেনাদের একটি বৃহৎ দল কাকডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার খবরে বালিয়াডাঙ্গা বাজারের অনতিদূরে হঠাৎগঞ্জ পুকুর পাঁড়ে অবস্থান নিয়ে ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহর নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমন চালিয়ে ২৯জন পাক সেনাকে হত্যা করে।

এরপর বালিয়াডাঙ্গায় ২০ সেপ্টেম্বর পুনরায় ভয়াবহ দীর্ঘক্ষনব্যাপী সম্মুখ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বহু পাকসেনা নিহত হয়। শহীদ হন ১৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন কয়েকজন বীরসেনানী।

এর আগে ২৭ আগস্ট কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন (প্রয়াত), আব্দুল গফফার, আব্দুর রউফ, আবু বকর (পরবর্তীতে শহীদ) সহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা হিজলদী পাকবাহিনীর ঘাটিতে আক্রমন করলে ৩০ জনের মতো পাক সেনা নিহত হয়। ওই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ঘাটির পতন হলে কলারোয়া থানার মধ্যে সর্বপ্রথম অর্থাৎ ২৭ আগস্ট চন্দনপুর ইউনিয়ন পাক হানাদারমুক্ত হয়। উল্লেখ্য, ওই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম কলারোয়া থানার কাউরিয়া গ্রামের আবু বকর পরবর্তীতে তালা থানার একটি খন্ডযুদ্ধে শহীদ হন।
অক্টোবরের শেষ দিকে চন্দনপুরের গেরিলা গ্রæপ পার্শ্ববর্তী যশোরের শার্শা থানার বাগআঁচড়ায় অভাবনীয় দু:সাহসিক আক্রমন চালিয়ে ৭জন পাক রেঞ্জার ফোর্সকে হত্যা করে।

পরবর্তীতে চন্দনপুরের মুক্তিফৌজ ক্যাম্পে অস্ত্র পরিষ্কার করার সময় অসাবধানতা বশত গুলি বেরিয়ে গেলে শাহেদ আলী ও নূর মোহাম্মদ শহীদ হন। তাদের কবর চন্দনপুর হাইস্কুলের সামনে গয়ড়া বাজারে।

গয়ড়া বাজারে ওই ২জন ছাড়াও কলারোয়া ফুটবল মাঠের দক্ষিন পাশে ৫জন, উত্তর মুরারীকাটির পালপাড়ায় ৯জন, সোনাবাড়িয়ায় ৬জন, বামনখালিতে ২জন, বালিয়াডাঙ্গায় ৭জন, ভাদিয়ালীতে ৪জন, শার্শার জামতলায় ৫জন সহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে শহীদদের কবর, গণকবর বিদ্যমান।

এভাবে একের পর এক সফল অপারেশনের মধ্য দিয়ে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের প্রত্যাশায় পাক বাহিনীর কবল থেকে কলারোয়া’কে মুক্ত করেছিলেন ৭১’র ৬ ডিসেম্বর। মুক্ত হয় কলারোয়ার মা, মাটি ও মানুষ।

জানা যায়- স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্তিমলগ্নে এসে ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া পাক হানাদার মুক্ত হওয়ার দিনে গয়ড়া থেকে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোসলেম উদ্দীনের (প্রয়াত) নেতৃত্বে, খোঁরদো থেকে আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে ও বালিয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী সীমান্ত এলাকা থেকে ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ’র নেতৃত্বে সঙ্গীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা কলারোয়া সদরে উপস্থিত হন। বীর সেনানীরা ও মুক্তিকামী জনতা কলারোয়া থানা ভবন চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন। তাই ৬ ডিসেম্বর দিবসটি কলারোয়াবাসীর জন্য ও কলারোয়ার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আনন্দ ও গর্বের দিন, চির স্মরণীয় দিন।

লেখক:
প্রফেসর মো. আবু নসর
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা।
০১৭১৭-০৮৪৭৯৩।

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসরবিস্তারিত পড়ুন

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবুবিস্তারিত পড়ুন

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত প্রফেসর মো. আবু নসর ৫২’রবিস্তারিত পড়ুন

  • পবিত্র মিরাজের শিক্ষা স্রষ্টার ইবাদত ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
  • সাতক্ষীরার প্রথম মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ
  • বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী আশুরা
  • জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি: চীনকে ছাড়িয়ে ভারত
  • ঈদুল আযহা : ঐতিহাসিক ত্যাগের মহান স্মরণিকা
  • শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ের দিন ‘মে দিবস’
  • বরকতময় পবিত্র শবে বরাত
  • ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মূল চালিকা শক্তি
  • চেতনায় ’৭১: মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়া
  • ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া হানাদারমুক্ত দিবস প্রফেসর মো. আবু নসর
  • সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী (সাঃ)
  • আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি-ই হলো কোরবানি