সাতক্ষীরায় মানবপাচার ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক ব্রিগেড গড়ে তোলার আহ্বান
সাতক্ষীরায় মানবপাচার ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক ব্রিগেড গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, ভৌগলিক কারণে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা। এ জেলার সীমান্ত দিয়ে দারিদ্র্যের কারণে অনেক সময় মানব পাচারের মতো ঘটনা ঘটে। কাজের সন্ধানে অনেকেই সীনানা পেরিয়ে ওপারে প্রতিবেশি দেশে চলে যায়। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কড়া নজরদারী সত্ত্বেও চোরাই পথে দালালদের মাধ্যমে পাচার হয় অনেকেই। সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বিজিবির হাতে আটক হওয়ার পর তাদের সোপর্দ করা হয় সংশ্লিষ্ট থানায়। এক্ষেত্রে মামলা হলে কখনো কখনো তার বাদী হয় পুলিশ। তাছাড়া মামলার তদন্ত পুলিশের উপর ন্যস্ত হয়। এক্ষেত্রে আইনী জটিলতার সৃষ্টি হয়। আইনী জটিলতার দরজা ভেদ করে বিচারের কাঠগোড়ায় পৌছাতে আইন প্রয়োগ সংস্থা ও ভিকটিমকে হতে হয় সীমাহীন হয়রানীর শিকার।
সোমবার (২৭ জুলাই) বিকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ডিজিটাল কর্নারে অনুষ্ঠিত শিশু পাচার প্রতিরোধ ও সুরক্ষা এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নিরসনে শিশু ও নারী বান্ধব সংবাদ পরিবেশনা বিষয়ে মিডিয়া হাউস ও সাংবাদিক সংগঠনের সাথে জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহ সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এ ব্যাধি দূর করতে না পারলে আলোকিত সমাজ গঠন করা অসম্ভব। এজন্য সামাজিক ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে উঠোন বৈঠক করার তাগিদ দেন বক্তারা।
বক্তারা আরো বলেন, বিজিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা ঘটেছে গত এক বছরে ১০৩ টি। এরমধ্যে মামলা হয়েছে ৫৬টি। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন।
অপরদিকে জেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সাথে সরাসরি যুক্ত আছেন ১৮৭৮ জন। প্রতিমাসে মিটিংও হয়। কিন্তু রোধ করা যায়নি মানব পাচার ও বাল্যবিবাহ।
তাই সমাজের সকলকে ভয়ঙ্কর এ দুটি সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।
সভায় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসের তথ্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ওই সাত মাসে সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত থেকে বিজিবি ২৩৬ জন পুরুষ, ৮৪ জন নারী, ২১ জন শিশু উদ্ধার করে।
এসব উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয় ১০৩টি। এভাবে প্রতিবছর পাচারের শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশু।
সাতক্ষীরা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ সদস্য এড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি।
এসময় বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, রুহুল কুদ্দুস, বিডি নিউজ ও দেশ টিভির শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, বণিক বার্তার গোলাম সরোয়ার, করতোয়ার সেলিম রেজা মুকুল, বাংলা ভিশনের আসাদুজ্জামান, ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্টের এসএম শহীদুল ইসলাম, দৈনিক পত্রদুতের আব্দুস সামাদ, বাংলা ট্রিবিউনের আসাদুজ্জামান সরদার, সূর্যের আলোর মুনসুর রহমান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ও সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইনসিডিন বাংলাদেশ সাতক্ষীরার প্রতিনিধি মোঃ সাকিবুর রহমান বাবলা।
বক্তরা বলেন, শিশু পাচার প্রতিরোধ করতে হলে সবার আগে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। অনেকে ফেইসবুকে মিথ্যা তথ্য নিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের পাচার করে দিচ্ছে। পাচার বলতে একটি দেশ থেকে আরেক দেশে পাচার নয়। দেশের মধ্যেও কাজ-চাকরির কথা বলে পাচার করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে অভিভাবক এবং প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।
সভায় ইলেক্ট্রনিক্স, প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজপোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)