ডাকের কেনাকাটায় পুকুর চুরি, ৬০ হাজার টাকার এসি ৫ লাখ!


ডাক বিভাগের সেবার মান হবে উন্নত। দ্রুত সময়ে ডাক বাছাই প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করে দুর্গম এলাকায় পৌঁছে যাবে গ্রাহকের পণ্য। সেই লক্ষ্যে ২০১৮ সালে জানুয়ারিতে মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৪টি জেলায় মেইল সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডাক বিভাগ।
এসব সেন্টার নির্মাণের জন্য ৩০ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনে ডাক বিভাগ। যে কেনাকাটায় রীতিমতো পুকুর চুরি হয়েছে। একেকটি পণ্য বাজার মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। ডাকের মহাপরিচালক থাকা অবস্থায় এর সবই করেছেন শুধাংসু শেখর ভদ্র।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাজারে যে এসির দাম ৬০ হাজার টাকা, প্রকল্পে ওই এসি ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় কেনা দেখানো হয়েছে। একইভাবে, ৫৩ লাখ টাকার জেনারেটর ৭৪ লাখ টাকা, ২২ লাখ টাকার ফর্ক লিফট ৫০ লাখ টাকা, ৯ লাখ টাকার সোলার সিস্টেম ৪১ লাখ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার পজ মেশিন ৩৫ হাজার টাকায় কেনা দেখানো হয়েছে।
অথচ বাজার মূল্যের কয়েকগুণ বেশি দামে কেনা মানহীন ১৭ হাজার পজ মেশিন ব্যাবহার অনুপযোগী অবস্থায় মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। তাহলে অতিরিক্ত মূল্যে কেনা এসব পজ মেশিন কি কাজে আসবে?
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. মনসুর রহমান মোল্লা জানিয়ে দিলেন, এখানে তার করার কিছুই নেই। তিনি বলেন আমার কর্তৃপক্ষ আছে, বিভাগীয় প্রধান আছেন। দয়া করে তার সঙ্গে কথা বলেন। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই।
পরে ডাক অধিদফতরে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি মোবাইলে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও কারো সাড়া মেলেনি।
হারুনুর রশীদ প্রকল্পের কেনাকাটার কমিটি নথিতে ব্রাইট সলুয়েশন, লিটল প্ল্যানেটর নাম ব্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ডাক বিভাগের সঙ্গে তাদের কোনো কেনাবেচা হয়নি। এমনকি কোটেশন দেওয়া-নেওয়াও হয়নি। এ প্রকল্প সম্পর্ক তারা কিছুই জানেন না বলে জানান।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, অনেকটা ভৌতিকভাবে এসব পণ্য সরবরাহের কাজটি পায় সুধাংশু শেখরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সিস্টেম ইজ্ঞিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান। তারা জালিয়াতি করে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। এভাবে সিস্টেম ইজ্ঞিনিয়ারিং প্রায় ২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অবশ্য বলছেন, অনিয়ম প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা নেবে সরকার।
মন্ত্রী বলেন, আপনারা আমাকে দেখিয়ে দেন, আমি ব্যবস্থা নেব। সেই জায়গা পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমার।
এরইমধ্যে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক শুধাংসু শেখর ভদ্র এবং বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের অনিয়মের অভিযোগে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
