সুইসাইড নোট উদ্ধার! তালায় গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ
টাকা ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তালা উপজেলার নগরঘাটার মিঠাবাড়ী গ্রামের এক গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
সে একই গ্রামের মৃত. শেখ আব্দুল্লাহ’র স্ত্রী। রবিবার আনুমানিক সকাল ৯ টার দিকে মিঠাবাড়ি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
এদিকে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর পরে তার ঘরের তোষকের নিচ থেকে একটি সুইসাইড নোট ও ২ টির পাঁচ শত টাকার নোট উদ্ধার করা হয়।
অপরদিকে পরবিারের সদস্যদের দাবি ওই সুইসাইড নোট ফেরদৌছি খাতুনের লেখা নয়।
জানা যায়, কয়েক দশক আগে নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি গ্রামের মৃত. শেখ জাকির হোসেনের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ’র সাথে সরুলিয়া ইউনিয়নের ভারসা গ্রামের ইনসাফ সরদারের বড় মেয়ে মোছাঃ ফেরদৌছি খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের কোলজুড়ে ক্রমান্বয়ে ২টি মেয়ে ও ১ টি ছেলে সন্তান জম্মলাভ করেন। ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে ২০০৬ সালে শেখ আব্দুল্লাহ মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে আব্দুল্লাহ প্রায় ৪ একর জমির মালিক ছিলো। সেই সম্পত্তি ও টাকা আত্মসাৎ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে একই গ্রামের লুৎফর গাইনের ছেলে নারীলোভী আব্দুস সবুর গাইন (৪৫)। এক পর্যায়ে মৃত. শেখ আব্দুল্লাহ’র স্ত্রী মোছাঃ ফেরদৌছি খাতুনকে বিয়েও করেন তিনি। এরপরে ফেরদৌছির প্রথম স্বামীর বাড়িতে টাকা-পয়সা নিয়ে সবুর আরাম আয়েশে দিন কাটাতে থাকে। এভাবে সবুর টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল মিলে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো। তা লোকেমুখে ফেরদৌছির প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা জানতে পারেন। অত্র এলাকার মেম্বারের মাধ্যমে সুবুরের কাছে ওই টাকা চেয়েছিলো ফেরদৌছির প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা। সবুর তা না দিয়ে ওই গৃহবধূকে কৌশলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বাড়ির পাশ্ববর্তী ধান ক্ষেতের ড্রেনে ফেলে দেয় বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। এ নিয়ে গ্রামজুড়ে চলছে তুমুল গুঞ্জন।
এদিকে গৃহবধূর মৃত্যুর পরে তার ঘর পরিষ্কার করতে যেয়ে তোষকের নিচ থেকে একটি সুইসাইট নোট ও ২ টির পাঁচ শত টাকার নোট উদ্ধার করে ফেরদৌছির পরিবারের লোকজন।
এ ব্যাপারে নগরঘাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুস সামাদ জানান, ওই গৃহবধূ ফেরদৌছি দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে না থেকে প্রথম স্বামীর ঘরে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন। সবুরের সাথে পারিবারিক কলহ দীর্ঘদিনের ফেরদৌসীর। তার কাছ থেকে সবুর বহু টাকা নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। ওই টাকার বিষয়ে ফেরদৌছির প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা জানতে পারায় তাদের পরিবারের মধ্যে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি হয়। সেটিকে পুঁজি করে কৌশলে ফেরদোছিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে কে বা কারা তার বাড়ির পাশ্ববর্তী ড্রেনের মধ্যে ফেলে রাখে। ওই গৃহবধূর লাশ দেখে মনে হয়নি যে সে বিষ খেয়েছে। তার মুখে কোনো গন্ধও দেখিনি। তবে একজন মানুষ বিষ খেলে যেভাবে পড়ে থাকে সেভাবে ফেরদৌছিকে দেখিনি আমরা।
বিষয়টি সম্পর্কে গৃহবধূর মেয়ে আকলিমা খাতুন জানান, বাবার মৃত্যুর পরে আমার মা এলাকার সবুর নামের এক ব্যক্তিকে বিবাহ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি আমার মা আমাদের বাড়িতে থাকেন। কখনও সবুরের বাড়িতে ছিলো না। পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে আমার বাবার প্রায় ৪ একর জমির মালিক ছিল। ওই জমির অধিকাংশ আমার মা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বন্ধক রেখে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সবুরকে দিয়েছিলো। এছাড়াও আমার মা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল, তার নামে রেজিষ্ট্রীকৃত ৫ শতক জমির দলিল সবুরের কাছে রেখে দেয়। তা লোকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরে মা বলেছিলাম। আমার মা আমাদের কাছে বলেছিল ১ মাসের মধ্যে সবুরের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে তাদের টাকা পরিশোধ করে দিবো। ওই ঘটনার পরের দিন কে বা কারা আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমার মায়ের ঘরের তষকের নিচে একটি সুইসাইড নোট ও ২ টির পাঁচ শত টাকার নোট রেখে দিয়েছে। ওই নোটের লেখের সাথে আমার মায়ের হাতের লেখার কোনো মিল নেই। আমার মাকে হত্যার করার পূর্বে বা পরে কেউ আমাদের সম্মান নষ্ট করার জন্য ওই ঘরের তোষকের নিচে ভূয়া সুইসাইড নো্ট রেখেছে। আমার মায়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য জেলা পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই গৃহবধূকে শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যা করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কে বা কারা একটি বিষের বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ির পাশ্ববর্তী ড্রেনের মধ্যে পশ্চিম দিকে হেলান দিয়ে ফেলে রাখে। ওই সময়ে গৃহবধূর ডান পায়ে একটি জুতা ছিলো। এবং বাম পা ভাঁজ করা অবস্থায় ছিলো। তখন তার মুখে কোনো বিষের গন্ধ ছিল না।
তারা আরও জানান, সবুরের সাথে বিয়ে করে ফেরদৌছি। কিন্তু কখনও সুখী ছিলো না ওই দম্পতি। প্রায় সময় টাকার জন্য সবুর ফেরদৌছিকে মারপিট করতো। এমনকি মৃত্যুর পূর্বের রাতে সুবর ফেরদৌছিকেও মারপিট করেছিল তা আমরা জেনেও কিছু বলতে পারিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, নগরঘাটা গ্রামের চৌকিদার আব্দুস সবুরের দ্বিতীয় স্ত্রী ফেরদৌসি খাতুন। ফেরদৌসি খাতুনের প্রথম স্বামী আব্দুল্লাহ বছর তিনেক আগে মারা যান। পরে আব্দুস সবুরকে বিয়ে করেন তিনি। তবে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে জানা যাবে কি কারণে তিনি মারা গেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)