কলারোয়ায় বোরো ধান কেটে-ঝেড়ে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক, চলছে সিদ্ধ ও চাল তৈরির কাজও
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ইরি-বোরো ধান কাটার ধুম চলছে। ধান কাটার পাশাপাশি মাড়াই বা ঝাড়াও চলছে পুরোদমে। আবার ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে চালে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াও চলমান। সব মিলিয়ে দিনরাত মহাব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষানী ও সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছর বোরো চাষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা, ঝাড়া/মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কিষান-কৃষানিরা। ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে ধান মাড়াই করে চালও তৈরি করে ফেলেছেন অনেকে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে সোনালি ধানের ম–ম গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন তাঁরা। কথা বলার মতো যেন ফুরসত নেই তাঁদের। ভোর থেকে দিনভর, এমনকি গভীর রাতেও কাজ করতে হচ্ছে তাদের। মাঠের সোনালি ধান ঘরে তুলতে ও তৎপরবর্তী কর্মযজ্ঞতায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকসহ ধান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষক ধান কেটে আঁটি বেঁধে কেউ মাথায় করে, আবার কেউ পরিবহনে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। গরু গাড়ির চলন দেখা না গেলেও চলতি সময়ে গ্রামাঞ্চলে ধান পরিবহনের ক্ষেত্রে গরু গাড়ির দেখা মিলছে। কেউ আবার গরুর পরিবর্তে শ্যালো ম্যাশিন চালিত ইঞ্জিন সংযুক্ত করে পিছনে গরুর গাড়ির অংশ লাগিয়েও ধান পরিবহন করছেন। এছাড়া ভ্যান, ট্রলিসহ অন্যান্য ভাবে ধান পরিবহন করতে দেখা গেছে।
ফসলি মাঠেই কিংবা বাড়ির উঠানে চলছে ধানমাড়াইয়ের কাজ, স্থানীয়রা যেটা ধান ঝাড়া বলে থাকেন।
ধান সিদ্ধ করার কাজও চলছে পুরোদমে। অনেকেই ধান সিদ্ধ করছেন বা করেছেন। দিনের বেলা প্রখর রোদ আর গরমের কারণে অনেকেই আবার গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে ধান সিদ্ধ করার কাজও করছেন। সকাল থেকে সেই সিদ্ধ ধান রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকের ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজও শেষ হয়ে গেছে। ঢেঁকির প্রচলন প্রায় উঠে যাওয়ায় অনেকে ধানভাঙানোর মিলে গিয়ে ধান মাড়াই অর্থাৎ চাল তৈরি করছেন।
সব মিলিয়ে এখন ধান নিয়ে কৃষকের যেমন ব্যস্ততা, তেমনি আনন্দও লক্ষ করা যাচ্ছে।
অনেক কৃষক জানিয়েছেন, ‘চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় বিকল্প সেচ দিয়ে ধান চাষ করা হয়েছিলো। তবে ধান কাটা বা তোলার সময় বৃষ্টি হলে সেটা কৃষকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়। চলতি সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকটা নির্বিঘ্নে ধান কাটা, ঝাড়া, সিদ্ধ, শুকানো, মাড়াই ইত্যাদি কাজ চলমান বা শেষ পর্যায়ে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার জন বা কামলার দাম বেশি, লোকজনও তেমন পাওয়া যায় না।’
সরেজমিনে বেশ কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ব্রি-২৮, ব্রি-৮১, ব্রি-৬৩, ব্রি-৫০ তথা সুগন্ধি, শুভলতা, মিনিগেটসহ নানান জাতের ধান কৃষকেরা কেটেছেন। এছাড়া দু’একটি মাঠে ব্রি-২৯ জাতের পাকা ধানও কাটা হচ্ছে।
উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি মাঠে দেখা যায় কৃষক মনিরুল, রবিউলসহ আরো অনেক কৃষক বিভিন্ন জাতের ধান কাটছেন।
তাদের একজন জানান, ‘নেক ব্লাস্ট সহ বিভিন্ন রোগবালাই কম হওয়ায় এবার ধানের আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। বিঘা প্রতি প্রায় ২০ মণ আবার কিছু ক্ষেত্রে ২০ মণের বেশি হারেও ধান হয়েছে।’
মৌসুমের শুরুতেই ধানের দাম নিয়েও খুশি কৃষকরা। পুরোপুরি শুকনো একমণ ধান ১হাজার ৮০ থেকে সাড়ে এগারোশ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ধান ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তরিক জানান, ‘ধানের দাম উঠানামা করে। তবে বর্তমানে মণ প্রতি শুভলতা ১হাজার থেকে ১হাজার ২০ টাকা, ২৮ধান ১হাজার ৮০ থেকে ১১’শ টাকা, মিনিগেট ১১’শ এর উপরে কেনাবেচা হচ্ছে।’
কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, ‘উপজেলায় এ বছর ১৭হাজার ৫’শ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। জমি ও এলাকা ভেদে ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৬টন ও বিঘা প্রতি ২৪/২৫ মণ।’
তিনি আরো জানান, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া অব্যাহত আছে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)