বেনাপোলে পাসপোর্ট যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন অব্যবস্থাপনায় করোনা ঝুঁকি বাড়ছে
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ভারত ফেরত বাংলাদেশিদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় না থাকায় তাদের পরস্পরের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এতে সংক্রমণ বাড়ছে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। এ ছাড়া যাত্রীদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণে তদারকির অভাবে দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ আরও বেশি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে তারা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কিনা তা দেখবেন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি এরা। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, তাদের কেউ অবগত না করায় তারা কাজ করতে পারছেন না।
দেশে করোনা সংক্রমণের আগে দেড় লাখের মতো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ভারত ফেরত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৫১ জন বাংলাদেশি যাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা বিস্তার রোধে ভারত ফেরত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন সরকারি তত্ত্বাবধানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছিল। পরে সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত হলে তাদের বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র দেওয়া হতো। ১৩ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাতিল করে হোম কোয়ারেন্টিনের পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। তবে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসন বা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাজ করার কথা। কিন্তু কারো কোনো তদারকি না থাকায় যাত্রীরা বাড়িতে ফিরেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশছেন। ফলে করোনা সংক্রমণ বিস্তারের আশঙ্কা আরও বাড়ছে। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ভারত ফেরত যাত্রীদের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অবহিত না করায় তারা প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কাজ করতে পারছেন না।
গত মাসের ১৯ তারিখে ভারত ফেরত যাত্রী ঢাকার আবু সুফিয়ান বলেন, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্যকর্মী বা কোনো জনপ্রতিনিধি কেউ খবরও নেয়নি। তবে তদারকি থাকলে ভালো হয়।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব বলেন, পুলিশ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যাত্রীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে ইমিগ্রেশনে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় কিছুটা সমস্যা হয়।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যাত্রীদের হোম কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে অবহিত করা হচ্ছে। পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণে কাজ করার কথা।
যশোরের শার্শা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউয়িন পরিষধের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, যখন যাত্রীরা ভারত থেকে ফিরছেন তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হচ্ছে না। বাড়িতে এসেই তারা বাজারহাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে সংক্রমণের ভয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। ৪-৫ দিন পর যখন সাধারণ মানুষের মাধ্যমে তারা জানতে পারছেন এরই মধ্যে ভারত ফেরত ব্যক্তি জনসাধারণের সাথে মিশে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা যদি ভারত ফেরতদের তালিকা যার যার এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছে দেন তবে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সুবিধা হবে।
গত ৭ জানুয়ারি থেকে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ভারত ফেরত যাত্রীদের করোনা প্রতিরোধে কাজ করছেন ইমিগ্রেশন পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ২৮ জুন পর্যন্ত ভারত ফেরত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৫১ জন বাংলাদেশি যাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেছে এক যাত্রীর শরীরে। এ সময় ইমিগ্রেশনের চার পুলিশ সদস্য ও তিন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)