কলারোয়ায় ফোর মার্ডার মামলার মৃত্যুদণ্ড রায়ে এলাকায় আনন্দ-উল্লাস
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের ভাই-ভাবি, ভাতিজা ও ভাইপো-কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা মামলার একমাত্র আসামী রায়হানুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়ায় এলাকায় আনন্দ-উল্লাসের সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমানের দেওয়া এ রায় শুনে এলাকার সাধারণ মানুষ মোড়ে মোড়ে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
এলাকার সূধীজন, গুনিজন ও সচেতন মহলসহ সবার মুখে একই কথা এ রকম একটি চাঞ্জল্যকর হত্যা মামলার সস্তোষজনক রায় এতো শীঘ্রেই হবে তা তারা কল্পনাই করতে পারেনি। এমনকি তাদের পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজন এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানা যায়।
এদিকে এ রায়ে বুধবার বিকালে সরেজমিনে স্থানীয় ইউপি মহিলা সদস্য নাছিমার বাড়িতে থাকা হত্যাকান্ড থেকে বেঁচে যাওয়া শিশু মারিয়ার মুখও হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। বর্তমানে শিশু মারিয়া জেলা প্রশাসকের তত্ত¡াবধায়নে ওই ইউপি সদস্যার বাড়িতে লালিত-পালিত হয়ে বড় হচ্ছে।
এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, শিশু মারিয়া বড় হয়ে একদিন জানতে পারবে তার পিতা-মাতা ও ভাই-বোনকে ঘুমান্ত অবস্থায় একে একে তার আপন চাচা রায়হানুর নৃসংশভাবে হত্যা করেছিলো এবং তার সুষ্ঠু বিচার হয়েছে। তখন তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন হারানোর সব ব্যাথা বেদনা, দুঃখ কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
উল্লেখ্য,কলারোয়া উপজেলার ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান (৩৬) বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে খাওয়া দাওয়া করতো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কাজ না করায় ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্ত্রী তালাক দেয় রায়হানুর রহমানকে। সংসারে টাকা দিতে না পারায় শাহীনুরের স্ত্রী দেবর রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দও করতো।
এরই জের ধরে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই শাহীনুর রহমান (৪০), ভাবী সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয় এর সাথে ঘুমের বড়ি খাওয়ায় এ মামলার একমাত্র আসামী রায়হানুর রহমান (৩৬)।
এরপর ভোর চারটার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ সময় তাদের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে তাকে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শ্বাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার ওফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজীর স্ত্রী ময়না খাতুন বাদী হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে কলারোয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তে নেমে সিআইডি সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে শাহীনুরের ভাই রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক দালাল, আব্দুল মালেক ও ধানঘোরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গত বছরের ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মন্ডলের কাছে রায়হানুর নিজেই হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম আসামী রায়হানুর রহমানের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় গত ১৪ জানুয়ারী অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারক এ মামলায় ১৮ জন স্বাক্ষী ও একজন সাফাই স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করে গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এ রায় দেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)