বেনাপোল বন্দরে শুল্কফাঁকি আর অব্যবস্থাপনায় তিন বছরে রাজস্ব ঘাটতি ৪ হাজার ৭০০ কোটি
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশের সর্বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়েছে।
তবে বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানির প্রবনতা বেড়ে যাওয়ায় মারাত্বক ভাবে রাজস্ব আয়ে ধস নেমেছে।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ পর পর তিন অর্থবছরে এ বন্দরে জাতীয় রাজস্ব আয়ে বোর্ডের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকা রাজস্ব কম আয় হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে আবারো ব্যবসায়ীরা এ বন্দরে ফিরবেন গতি ফিরবে রাজস্ব আয়ে। আর বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন বন্দর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।
জানা যায়, দেশের চলমান ১২ টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল স্থলবন্দর। রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্রগ্রামের পর বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এপথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বার বার অগ্নিকান্ডে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যেরও গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। বন্দরে পর্যাপ্ত জাইগা না থাকায় আমদানি পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন ভারতীয় ট্রাক দাড়িয়ে থাকছে।
ফলে লোকশানের কবলে পড়ে ব্যবসায়ীরা এবন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য বন্দরে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে বেড়েছে পণ্য পাচার। পন্য পাচার প্রতিরোধে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসায়ীদের দাবী ছিল বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজও পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। ফলে গত তিন অর্থবছরে এ বন্দরে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৭০১কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে। কিন্তু এ বন্দর থেকে এত টাকা সরকারের আয় হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। বন্দরের জায়গার অভাবে খোলা আকাশের নিচে মুল্যবান আমদানি পণ্য সামগ্রী অবহলো অযন্তে পড়ে থাকায় পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। বার বার বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও কাঙ্খিত উন্নয়ন আজও হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দওে চলে যাওয়ায় রাজস্ব আয় কমেছে।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, আমদানি পণ্যেও নিরাপত্তায় বন্দরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসায়ীরা দাবী জানিয়ে আসলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে একদিকে শুল্ক ফাঁকিতে সরকারের রাজস্ব কমছে অন্যদিকে লোকশানের কবলে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক চালকেরা বলছেন, বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য জাইগার অভাবে ট্রাক নিয়ে দিনের পর দিন দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন. প্রতিবছর রহস্য জনক অগ্নিকান্ডে বন্দরে আমদানি পণ্য পুড়ে ব্যবসাযীরা ক্ষতির শিকার হয়ে পথে বসছেন। বন্দরের অবহেলায় এমন ক্ষতি হলেও দায় নিচ্ছেনা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে অনেকে পড়ে ব্যবসার আগ্রহ কমেছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া সিসি ক্যামেরা, নতুন জায়গা অধিগ্রহন, পণ্যগার নির্মানসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা তাদেও রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে অনিয়ম কমবে বাণিজ্যে ফিরবে গতি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)