গ্রেনেড হামলা দিবস : বেনাপোলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভা ও দোয়ানুষ্ঠান
গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে বেনাপোল মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ও হামলায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু।
শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার সময় বেনাপোল মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে দিবসটি পালন করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড।
শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর হোসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, ওরা ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলেই এদেশের উন্নয়ন চিরতরে থমকে দেওয়া যাবে। ৭৫’র ১৫ আগষ্ট কালরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে নির্মমভাবে বুলেটের আঘাতে হত্যা করেছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ওখানেই ক্ষ্যান্ত হয়নি হায়েনার দল। নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে সেদিন রাতে হত্যা করেছিলো বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা, বড় ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসেরসহ কর্নেল জামিলকে।
সেদিন খুনিরা নির্বিঘ্নে হত্যা করেছিলো বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকের। ওই সময় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহেনা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঘাতকচক্র সেদিন রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। তাই তারা ২০০৪ সালের ১৫ আগষ্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আবারও বঙ্গবন্ধুর কণ্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার মিশন নিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। সে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহান আল্লার অশেষ রহমতে সেদিনও প্রাণে বেঁচে যান তিনি কিন্তু শ্রবণশক্তি অনেকটা হারিয়ে ফেলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট অজস্র মানুষের রক্তাক্ত বিভীষিকাময় একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। সেদিন দলীয় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে পারলেও গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপ্রতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী।
স্প্রিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা রাস্তা। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক ছিলো সেই দৃশ্য।
বেনাপোল মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বজলুর রহমান, শার্শার ডিহি ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম, লক্ষনপুর ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী লাল, বেনাপোল ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহআলম হাওলাদার, কায়বা ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা দীন ইসলাম দিনুসহ শার্শা উপজেলার ৬০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)