কেশবপুরে প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতিভা..


ছেলেটির নাম রাকিবুজ্জামান (১৫)। যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর গ্রামের দিন মজুর আবুল কাশেম ও রেবেকা বেগমের সংসারে জন্ম হয় এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর।
প্রতিবন্ধী হলেও পিত-মাতার বুকচেরা ধন, অতি আদরের। তাকে খুশিতে রাখতে সবসময় ব্যস্ত তাঁরা।
রাকিবের বয়স যখন পাঁচ তখন আশপাশের ছেলে মেয়েদের বই হাতে বিদ্যালয়ে যেতে দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে ওরা কোথায় যায়। তাদের হাতে কি? উত্তরটা পেতেই বলতে থাকে ওদের মত বিদ্যালয়ে যাবে। আবদার পূরণ করল পিতা-মাতা।
শিক্ষা জীবন শুরু হয় পাশ্ববর্তি হাসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ে। পড়ালখার সুযোগ হয় চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত। বিশেষ চাহিদা সমপন্ন শিশু হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলীগণ যত্ন করত তাকে। সে বেঞ্চে বসতে পারলেও দাঁড়াতে পারত না। দাঁড়াতে গেলে পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করত। বিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে সে কবিতা ও ছড়া আবৃত্তি করত। এতে সে নিজে আনন্দ পেত। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে এবং শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ায় তাকে আর তাঁর মা-বাবা বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে পারেনি।
কিছুদিন পার হতেই পুনরায় কেশবপুর শহরের অনন্ত সড়কের পাশে অবস্থিত ঋ-শিল্পী ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট শিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তি করে। কয়েকবছর সেই প্রতিষ্ঠানে পড়ে। বাড়ি থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া হয়নি আর। শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকলেও প্রতিভাবান শিশু হিসেবে পরিচিতি লাভ করে সে। দুই হাত অল্প নাড়াচাড়া করতে পারলেও পা দুইটি মোটেও নাড়াচাড়া করতে পারে না। সে ঘুরতে পছন্দ করলেও ঘোরা হয়ে ওঠে না। কারণ সে নাদুসনুদুস হওয়ায় তাকে নিতে কষ্ট হয়। বিধায় দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির সামনে চেয়ারে বসে থাকে।
জনগুরুত্বপূর্ণ ও সমসাময়িক বিষয়েও সে ভাবে। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস এর কারণে যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি না বাড়ে তার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে জন্য প্রতিবেশি ও বন্ধুদের আহ্বান জানায়। আবার মাইকে কোন কিছু প্রচার করা হলে সেটি মনোযোগ দিয়ে শোনে। সর্বগুণের অধিকারী সে।
রাকিব শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাঁর প্রতিভার সবচেয়ে নিদর্শন হলো বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ হৃদয় দিয়ে আত্মস্থ করা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাওয়া “যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই” গান করে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারকে হত্যা করায় তাতে সে ভীষণ মর্মাহত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই যে দেশ স্বাধীন হয়েছে তার কথা বলে। দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রশংসাও পঞ্চমুখ। কবিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, ঐতিহাসিক ভাষণ, মাকে নিয়ে গান গাওয়া তার প্রতি মূহুর্তের সঙ্গী।
রাকিবের পিতামাতা বলেন, আমাদের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও ওকে নিয়ে আমরা অনেক খুশি। প্রতিবন্ধী হলেও ওর অনেক গুণ আছে।
হাসানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজিদুর রহমান বলেন, এই প্রতিবন্ধী ছেলেটির বাঙ্গালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বক্তৃতা করতে দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে যে বুকে লালন করে তা দেখে আমি তাকে সাধুবাদ জানাই। ছেলেটির দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্যতা কামনা করি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
