প্রাথমিক সমাপনীর মতো জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও এবার হবে না
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রাথমিক সমাপনীর (পিইসি) মতো অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও এবার হবে না।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞতিতে বলা হয়, “২০২০ সালের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে করণীয় জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
“মহামারীর মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবারের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”
তবে অষ্টমের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে এর আগে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জেএসসি-জেসিডি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে না হলে অষ্টমের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে হবে কি না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই ছুটির মেয়াদ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা মহামারীর কারণে স্থগিত আটকে আছে। তবে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ ডিগ্রি ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার।
মহামারীকালে এবং পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সভা করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
সেই সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, সেক্ষেত্রে এইচএসসি পরীক্ষা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের বিষয়ে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হতে পারে সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার এইচএসসিসহ মাধ্যমিকের কোনো পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না- এমনটা ধরে নিয়েই ওই পরিকল্পনা করতে হবে।”
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এবার হচ্ছে না
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার।
তার বদলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। অতএব আমরা পিইসি পরীক্ষাটা নিচ্ছি না, এ বছর স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষাগুলো নেব।”
কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নিতে গত ১৯ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০০৯ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরুর পর থেকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষায় বসতে হত অন্য বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষার আয়োজন করে আসছিল। আর এই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই প্রাথমিক শেষ করা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছিল।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার কেন্দ্রীয় এ পরীক্ষা হবে না বলে প্রাথমিকে বৃত্তিও দেওয়া হবে না বলে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন।
গতবছরের প্রাথমিক সমাপনীর ফলাফলের ভিত্তিতে এবারও ৮২ হাজার ৫০০ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। পঞ্চমের সমাপনী পরীক্ষায় এবার মোট ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হলে তাতে এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে কি না জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, “এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে, আমরা তাদের দায়িত্ব দেব। শিক্ষকরা যেভাবে প্রশ্ন করবেন সেভাবেই হবে, স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এই সিদ্ধান্ত দেবেন।”
সচিব বলেন, “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) তিনটি বিকল্প পাঠ পরিকল্পনা করতে বলেছিলাম। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসের জন্য তিনটি পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল।
“যেহেতু সেপ্টেম্বরে এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি তাই সেপ্টেম্বরকে বিকল্প হিসেবে ধরছি না। অক্টোবর এবং নভেম্বরকে সামনে রেখে যে পাঠ পরিকল্পনা করেছি সেটাকে সামনে রেখে, সেটার ভিত্তিতে প্রত্যেকটা স্কুল ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেবে।”
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)