বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আগ্রহী পাকিস্তান, নিতে চায় শিক্ষার্থীও

দুই দশক পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) নবম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ঢাকা ও ইসলামাবাদ বাণিজ্য, কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি, খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা আরও জোরদারের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জেইসি নবম বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, পাকিস্তান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। দেশটি বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহী।
তাছাড়া সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও ব্যাংকিং খাতে সব মূল্যমানের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালির শতভাগ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিতে চায় দেশটি। ব্যাংক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণও দিতে চায় পাকিস্তান।
বৈঠকটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ জেইসি বৈঠক হয়েছিল ২০০৫ সালে। দুই দশক পর এ প্ল্যাটফর্মের পুনরায় কার্যক্রম শুরু হওয়াকে উভয় পক্ষই তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।
বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন, কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি ও সামুদ্রিক বিষয়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আলোচনায় কৃষি, বাণিজ্য, তথ্য-প্রযুক্তি, খাদ্য, বিমান ও নৌপরিবহনসহ নানা খাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যার লক্ষ্য দুই দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক। ২০ বছর পর আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করেছি এবং এটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি, খাদ্য, সামুদ্রিক পরিবহন ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে উভয় দেশ উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি কেবল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকেও এগিয়ে যেতে চাই।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যদি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এভাবে সহযোগিতা করে, তাহলে তা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে। আমরা এই সহযোগিতা কাঠামো আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি জানান, আলোচ্য বিষয়গুলোর অগ্রগতি তদারকির জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও নৌপরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নির্দিষ্ট ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হবে।
বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি। নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। কৃষি, গবেষণা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আইটি-সংক্রান্ত সহযোগিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
সফররত পাকিস্তানের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক জেইসি বৈঠক আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ২০ বছর পর জেইসি বৈঠক হওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই ইতিবাচক গতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতে উভয় দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া গেছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তা আরও কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বলেন, আমরা এই সহযোগিতা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব এবং পরবর্তী জেইসি বৈঠকে মিলিত হলে যেন উভয় দেশের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোয় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করতে পারি।
বাণিজ্য ঘাটতি কমানো প্রসঙ্গে মালিক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন এক বিলিয়ন ডলারেরও কম, যদিও দুই দেশেই বিপুল জনসংখ্যা ও পরস্পর পরিপূরক অর্থনীতি রয়েছে। আমাদের উচিত বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো এবং একে অপরের উন্নয়নে সহায়তা করা।
তিনি জানান, পাট বা পাটজাত পণ্যের বাইরে কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে পাকিস্তান আগ্রহী এবং অতিরিক্ত কৃষিপণ্য সংগ্রহের সম্ভাবনা খুঁজছে।
মালিক বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছ থেকে আমদানি অব্যাহত রাখবে এবং কৃষি, ওষুধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র অনুসন্ধান করবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা পাটের বাইরেও সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করব। যদিও পাট এই সহযোগিতার একটি প্রধান উপাদান হিসেবেই থাকবে।
তিনি আরও জানান, জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আজ আরও আলোচনা হবে।
সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফরের প্রসঙ্গ টেনে মালিক বলেন, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী গত আগস্টে বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং দুই দেশই বহুপাক্ষিক ফোরামে উচ্চ পর্যায়ে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব আরও জোরদার হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই ইতিবাচক গতি ধরে রাখব।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সম্প্রসারণ, সহযোগিতার সম্মত ক্ষেত্রগুলোকে কার্যকর করার এবং নির্ধারিত লক্ষ্যে পরবর্তী জেইসি বৈঠকে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) একটি দ্বিপাক্ষিক ফোরাম, যা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। ২০২৫ সালে জেইসি পুনরায় চালুর মাধ্যমে দুই দেশ অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারে নতুন অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পুলিশের ওপর আক্রমণ সহ্য করা হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পুলিশের ওপরবিস্তারিত পড়ুন
ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে বিএনপি গঠন করবে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট: সালাহউদ্দিন
আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে গঠন করা হবে বৃহত্তরবিস্তারিত পড়ুন
আগামি নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সারাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২বিস্তারিত পড়ুন
