শ্যামনগরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের ৬৬নং বড়কুপট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির কয়েক হাজার টাকা ও বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য সরকারের দেওয়া ৭ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে বদলির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে বিদ্যালয়ের সামনে কয়েক শ’ অভিভাবক ওই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মোঃ নাসির উদ্দীন গাজী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন গাজী সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জিএম শাহবুদ্দিন পারভেজ, অভিভাবক খায়রুল ইসলাম, অভিভাবক ফারুক হোসেন, মন্টু মিয়া, অভিভাবক নাসিমা খাতুন প্রমুখ।
এসময় কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন এলাকার তিন শতাধিক অভিভাবক, পিটিএ এবং এসএমসির সদস্যরা।
এদিকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সময় প্রধান শিক্ষক স্কুলে না থাকলেও সহকারী শিক্ষকগণ স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। শিক্ষার্থীরা কেন স্কুলে আসেনি জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক হোসনেয়ারা পারভীন বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তি কয়েক হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক তার নিজের মোবাইল ফোনে ওই টাকা আত্মসাত করেছেন মর্মে অভিভাবকরা অভিযোগ করলে তা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এতে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তিনি আরও জানান, শুধু তাই নয়, স্কুলের উন্নয়নে তিন বছরে সরকার ৭ লক্ষ ৫৫ হাজার দেয়। কোন কাজ না করে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এর আগে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল ওই প্রধান শিক্ষককে। এতে অভিভাবকরা হয় তো মনে করছেন, তাদের সন্তানরা ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়। যে কারণে স্কুলে কোন শিক্ষার্থী আসছে না।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যতদিন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বদলি না করা হবে ততদিন এই স্কুলে কোন শিক্ষার্থী পাঠদানের উদ্দেশ্য আসবে না।
বক্তারা আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে উপজেলার সোনাখালি প্রাইমারি স্কুল থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন অজয় কুমার সরকার। পরে তিনি যোগদান করেন ৬৬নং বড়কুপট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এখানেও নতুন করে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকারের দেওয়া টাকা আত্মসাত করায় আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। তারা বলেন, ২০১৬ সালে অর্থ আত্মসাতের দায়ে কয়েকমাস বহিষ্কার ছিলেন এই প্রধান শিক্ষক। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির নামের তালিকায় নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি জিএম শরফুদ্দীন পারভেজ বলেন, গত ২০২০-২১-২২ অর্থ বছরের বিদ্যালয়ের বরাদ্দের হিসাব জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করলে তাতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজের বরাদ্দের ৮ লক্ষ টাকা উঠালেও তিনি বিদ্যালয়ে কোন কাজ করেননি। খাতা কলমে কাজ দেখিয়ে টাকাগুলো আত্মসাত করেছেন। বাস্তবে দেখা গেছে, যে কাজের জন্যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার কোন কাজই তিনি করেননি।
সাবেক সভাপতি গাজী নাসির উদ্দীন বলেন, স্কুলে খাতা-কলমে কাজ দেখানো হয়েছে ৮ লক্ষ টাকার। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাদের কোন হিসাব দেখাতে পারছেন না। এমনকি কোন ভাউচারও দেখাতে পারছেন না।
দীর্ঘদিন এমন হিসাবের সমস্যা নিয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রধান শিক্ষককে নিয়ে বসাবসি করার পরে একটা হিসাব দিলে সহকারী শিক্ষকরা বলছেন, এখানে যেসব জিনিসপত্রের কথা লেখা হয়েছে তার ৯০ ভাগ জিনিস না কিনেই হিসাব দেখানো হচ্ছে।
অভিভাবক নাসিমা বেগম বলেন, ছেলে নাহিদ হাসান নয়ন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আজ পর্যন্ত উপবৃত্তি টাকা পাইনি। এজন্য একাধিকবার স্কুলে আসছি। কোন সুরাহা মেলেনি। একপর্যায়ে শীটে দেখা যায়, আমার ছেলের নামের সাথে প্রধান শিক্ষকের নাম্বার দেয়া। ওই নাম্বারে টাকা উঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শুধু আমার ছেলে নয়, অনেকের টাকাও প্রধান শিক্ষকের নাম্বারে আসে।
প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো ঠিক নয়। ২০১৬ সালে বহিস্কার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: রফিজ মিয়া বলেন, আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতির কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)