স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৪ মে থেকে লঞ্চ চালুর দাবি মালিকদের
আগামী ২৪ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো লঞ্চ চলাচলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা।
শনিবার (২২ মে) বেলা ১১টায় সদরঘাটে সংগঠনটির এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল। তিনি এ সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বোনাস দেয়ার জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য-সচিব, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান বরাবর প্রণোদনার জন্য যে আবেদন করা হয়েছে তা অনতিবিলম্বে মালিকদের মাঝে বণ্টনের দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়া এনবিআরের ধারণ ক্ষমতার ওপর অগ্রিম প্রদত্ত ছয় মাসের ট্যাক্স আনুপাতিক হারে মওকুফ, বিআইডব্লিউটিএ-এর ছয় মাসের কারভেন্সি ও বার্লিং চার্জ মওকুফ, নৌ-পরিবহন অধিদফতরের ছয় মাসের সার্ভে ফি মওকুফ ও ব্যাংক লোনের ছয় মাসের সুদ মওকুফ করার দাবি জানান তিনি।
বদিউজ্জামান বলেন, মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের নৌ সেক্টরের এক ক্রান্তিকালে শরণাপন্ন হয়েছি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে নৌপরিবহন ব্যবস্থা একেবারেই ধ্বংসের সম্মুখীন।
তিনি বলেন, গত মার্চ মাসে যখন দ্বিতীয় বারের মতো কোভিড-১৯ আমাদের দেশে হানা দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে তখন সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ পরিচালনার নির্দেশনার আলোকে আমরা ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকেরও কম যাত্রী নিয়ে জাহাজ পরিচালনা করি। লাভ লোকসান যা-ই ছিল অন্তত শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও ব্যাংক লোনের টাকা পরিশোধের একটা ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু লঞ্চ বন্ধ থাকায় আমরা সবদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, পরবর্তীতে আমরা দেখলাম সরকার পণ্যবাহী গাড়ি ও পণ্যবাহী নৌযান ব্যতীত গণপরিবহনসহ সবকিছুই লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসে। আমরা মেনে নিয়েছি। এরপর আমরা দেখলাম সমস্ত গার্মেন্টস খুলে দেয়া হলো। তারপর দোকানপাট, শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলে দেয়া হলো। তারপর সব মহানগরীতে গণপরিবহন (বাস) চলাচলের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর সব জেলায় জেলায় বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর বিমান চলাচলের অনুমতি দেয়া হলো। বাকি রইল আমাদের এই অবহেলিত লঞ্চ। কেন এই বৈষম্য?
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে অগ্রিম আয়কর, বিআইডব্লিউটিএকে অগ্রিম কারভেন্সি, ডিজি শিপিংকে অগ্রিম সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে যাচ্ছি। লঞ্চ চলুক আর না চলুক তাতে সরকার এক টাকাও মাফ করেন না। আমরা বিভিন্নভাবে বলেছি যে, অন্তত মাওয়া ও আরিচা যেহেতু পারাপার সার্ভিস সেহেতু ফেরিতে গাদাগাদি যাতে না হয় সে জন্য লঞ্চগুলো চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি।
বদিউজ্জামান বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। সরকারের পক্ষ থেকে ঈদে বাড়ি না যাওয়ার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও মানুষ নাড়ির টানে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করেনি।
আপনারা দেখেছেন মানুষ কিভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রিকশা, ভ্যান, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, সিএনজি, কার, মাইক্রোবাসে ১০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকা দিয়ে গেছে। সর্বশেষ ফেরিতে ওঠার জন্য মানুষ রশি বেয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ঝুঁকি নিয়েছে। ফেরিতে গাদাগাদি করে চলার কারণে ছয়জন যাত্রীর অকালমৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নৌ-পরিবহন সংগঠনটির এই নেতা বলেন, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ঈদের সময় ঢাকা নদীবন্দর থেকে ২২০টি লঞ্চ দিয়েও আমরা যেখানে হিমশিম খাই সেখানে মাত্র গুটিকয়েক ফেরি দিয়ে লাখ লাখ যাত্রী পারাপার করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার নেতা বদিউজ্জামান বলেন, এখন কালবৈশাখী চলছে। মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে জীবনের মায়া ত্যাগ করে প্রমত্তা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদী ট্রলারে করে পাড়ি দিয়ে এখনো সেই চাঁদপুর, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, ভোলা, ইলিশা, রাঙ্গাবালীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা আসছে। কোনো বাধাই তাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবচাইতে বড় কথা হলো- যে স্বাস্থ্যবিধির কারণে লকডাউন দেয়া হয়েছে কোথাও সেই স্বাস্থ্যবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে কেন লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে? অবিলম্বে লঞ্চ চলাচল শুরু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ-সভাপতি মো. সালাউদ্দিন, সাইদুর রহমান রিন্টু, পরিচালক আবুল কালাম খান, হামিদুল্লাহ সুমন, নিজাম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লঞ্চ চলাচলের দাবিতে সদরঘাট টার্মিনালে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)