১০ বছরের সাজা বহাল, ‘এমপি পদ হারাচ্ছেন’ হাজী সেলিম!
ঢাকা-৭ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারিক আদালতে তার যে তিন বছরের সাজা হয়েছিল- তা বাতিল করা হয়েছে।
হাইকোর্টে বহাল থাকা ওই রায় বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশ করা হয়েছে।
দুর্নীতি মামলায় হাজী সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ড বহালের রায় প্রকাশের পর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, সংবিধান অনুযায়ী হাজী সেলিমের এমপি পদ থাকবে না।
এর আগে খুরশীদ আলম জানিয়েছিলেন, হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সাজা বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সেটি দুদকের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর স্পিকার হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংবিধান ও নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ন্যূননতম দুবছর দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকার যোগ্যতা হারান যে কেউ। মুক্তিলাভের পাঁচ বছর পার না-হওয়া পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।
সংবিধানের ৬৬(২)-এর (ঘ) ধারা উল্লেখ করে আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী হাজী সেলিম সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ন্যূনতম দুবছর দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারাবেন যে কেউ।
গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে বিচারকের স্বাক্ষরের পর তা বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে।
রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে বিচারিক (নিম্ন) আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আদালত তার রায়ে বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজী মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ ধারা সংক্রান্ত আপিল গ্রহণ করা হলো। এই আইনের ২৭ (১) এ আপিলের অংশ খারিজ করা হলো।
এর আগে হাজী সেলিমের করা আপিলের ওপর গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ধার্য দিনে সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের করা আপিলের ওপর এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ।
হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে তার বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা করেছিল দুদক। এই মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিচারিক আদালত রায়ে হাজি সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এর বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট হাজী সেলিমের সাজা বাতিল করেন। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করে।
দুদকের করা আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন। একইসঙ্গে ওই আপিল (হাজি সেলিমের) হাইকোর্টে পুনঃ শুনানি করতে বলা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর ওই আপিলের আর পুনঃশুনানি হয়নি। এ মামলায় হাজী সেলিম জামিনে আছেন।
এরপর আপিলটি শুনানির উদ্যোগ নেয় দুদক। বিষয়টি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারিক আদালতে থাকা নথি তলব করেন। পরে কয়েক দফা শুনানি শেষে রায়ের জন্য রাখেন আদালত।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)