অশনির প্রভাবে বৃষ্টি : মণিরামপুরে মাঠে কেটেরাখা পাকা ধানের সর্বনাশ
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সৃষ্টি নিম্নচাপের কারণে সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে শুরু হওয়া টানা ৬ ঘন্টার বৃষ্টিতে যশোরের মণিরামপুরের মাঠে মাঠে কেটেরাখা হাজার হাজার বিঘা জমির পাকা বোরো ধান পানির উপর ভাসছে।
ধানচাষিরা বলছেন- আমাদের সকল স্বপ্ন শেষ। বৃষ্টি অবস্থায় মাঠে কাটা ধান সরানো, জালি দেওয়াসহ পলিথিন দিয়ে ঢেঁকে রাখা হয়েছে। কিন্তু ধান ভালো থাকবে কিনা যানিনা।
ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের চাষি রবিউল ইসলাম (৪৫) বলেন- আমাদের হানুয়ার মাঠে কেটেরাখা পাকা ধান এইবার দিয়ে তিনবার ভিজলো। এবার পানির উপর ভাসছে। অনেক ধানের চারা বের হয়ে গেছে। রবিউল ইসলামের বড় চাচা মোজাহার আলী (৬৫) বলেন- ধানের অবস্থা অনেক খারাব। মাঠের পর মাঠ কেটেরাখা পাকা বোরো ধান পানির উপর ভাসছে। হানুয়ার গ্রামের চাষি সামছুর রহমান বলেন- ঈদের পর থেকে মাঠে ধান কাটা, ধান সরানো ও শুকানোর কাজ করেছি। আজকের (সোমবার) বৃষ্টিতে সব কষ্ট মাটি হয়ে গেলো। টানা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ধান বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।
বৃষ্টি পরবর্তি সরেজমিনে দেখাগেছে- মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার মোবারকপুর, হানুয়ার ও দোদাড়িয়া মাঠে শত শত কিসান তাদের স্বপ্ন বাঁচানোর খুব চেষ্টা করছে। নারী-পুরুষ এক হয়ে মাঠে নেমেছে সারা বছর খেয়ে বেঁচে থাকার খোরাকি বাঁচানোর জন্য।
চালুয়াহাটি ইউনিয়নের মোবারকপুর মাঠে ধান সরানোর কাজ করছে ইবরাহিম হোসেন (৫০) নামের এক চাষি। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন- কথা বলার সময় নেই। ঈদের আগের দিন থেকে অনেক বৃষ্টি ছিলো। গত দুই-তিন দিন বৃষ্টি না থাকায় আমরা ধান কেটে মাঠে রেখেছিলাম। কিন্তু বাড়ি আনার আগেই সোমবারের বৃষ্টিতে সব সর্বনাশ হয়ে গেছে।
উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেছেন- আমাদের কাটা ধান বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। এতে এবার আমাদের বোরো চাষে লোকসানসহ অনেক ক্ষতি হবে।
হানুয়ার গ্রামের চাষি সিরাজুল ইসলাম (৪৫) বলেন- কিসান (শ্রমিক) সংকটের কারণে আমাদের ধান কাটতে দেরি হয়েছে। এজন্য এই বৃষ্টিতে ধরা খেয়েছি। তিনি আরও বলেন- আল্লাহর রহমতে এবার বোরো ধানের বাম্পার থেকে বাম্পার ফলন হয়েছিলো। কিন্তু ধানের বর্তমান যে অবস্থা তাতে খুব চিন্তায় আছি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন- বাজারে ধানের দামও ভালো ছিলো। কিন্তু পানিতে ভিজে যাওয়া ধান ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো কিনা জানিনা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে- চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলা ব্যাপী মোট ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো। জলাবদ্ধতার কারণে অন্তত ৫০০ হেক্টর জমিতে কৃষক ধান চাষ করতে পারেননি চাষিরা। ফলে ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানাগেছে- আমাদের জানামতে মণিরামপুর উপজেলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ পাকা ধান কাটা পড়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)