প্রদীপ জ্বালিয়ে এন্ড্রু কিশোরকে শ্রদ্ধা জানালেন অনুরাগীরা
ছবির সামনে প্রদীপ জ্বলছে। ফুলও আছে নানা দিকে। কারও ছবির সামনে প্রদীপ জ্বললে, ফুল থাকলে বুঝতে বাকি থাকে না, ছবির মানুষটা নেই। তাকে পাওয়া যাবে না কোনো আয়োজনে, প্রয়োজনে। সদ্য প্রয়াত এন্ড্রু কিশোর তেমনই একজন। সকালে নিজ শহরে সমাহিত করা হয় তাঁকে। সারা দিন ফুলেল শ্রদ্ধায়, সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে স্মরণ করা হয় তাঁকে।
তখন ঘড়িতে ৬টা বেজে ৪৩ মিনিট। রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর খ্রিষ্টান কবরস্থানে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। ফুলে ফুলে ঢেকে থাকা কবরে তখনো মিটমিট করে জ্বলছে দুটি মোমের আলো। পাশে শ্রদ্ধায় অবনত দুই যুবক সাব্বির ও আফসান। তাঁদের বাসা রাজশাহী নগরের হোসেনিগঞ্জ এলাকায়। সারা দিন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিড়ে ঢুকতে পারবেন কি না, সেই অনিশ্চয়তায় অপেক্ষা করছিলেন। ফাঁকা পেয়ে এই সময়ে তাঁরা এসে দাঁড়িয়েছেন প্রিয় শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের কবরের পাশে। এসব দেখে সেই গানটিই মনের মধ্যে বেজে উঠল, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি…।’ সত্যিই মানুষের হৃদয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন। বুধবার এন্ড্রু কিশোরকে এই কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।
তাঁর সমাধি ঢেকে গেছে নানা সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেওয়া ফুলে ফুলে। বিচিত্র ফুলের তোড়া, ডালা। এসবের মধ্যে একটি ফুলের ডালায় চোখ আটকে গেল। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমরা তোমায় ভুলব না, অমিত ও পাপা, কলকাতা’। এই অমিত ও পাপার সঙ্গে দেখা হয়নি। কিন্তু বোঝা গেল শিল্পীর সঙ্গে তাঁদের কী গভীর সম্পর্ক ছিল। সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে শত মানুষের ভিড়ে সিরাজগঞ্জের এক ভক্ত খোকন শেখ এসে ‘আমার ইচ্ছে করে বুকের ভেতরে লুকিয়ে রাখি তারে’—এই গান গেয়ে সবাইকে কাঁদিয়েছেন। তিনি নিজেও কেঁদেছেন। সে সময় মানুষের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সিটি চার্চের গেটে পাহারায় দাঁড়ানো একজন পুলিশ সদস্যকেও গাইতে শোনা যায়, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি…’।
ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজশাহী নগরের অলংকার মোড়ে ‘ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদ’–এর পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বালন করে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল, যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকেই যেন একটি করে প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা হয়।
গত ৬ জুলাই রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায় অবস্থিত এন্ড্রু কিশোরের বোন শিখা বিশ্বাসের বাসায় এন্ড্রু কিশোর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তারপর থেকে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিমঘরে রাখা হয়েছিল। সন্তানেরা ফিরে এলে তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান করা কথা ছিল। অস্ট্রেলিয়া থেকে ছেলে ও মেয়ে এসেছেন। তারপর সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হলো।
সূত্র প্রথম আলো
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)