বকেয়া ৪৮ কোটি টাকা, ক্ষতিপূরণ না পেয়ে দিশেহারা তালার পাখিমারা বিলের জমির মালিকরা


সেলিম হায়দার : কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত জোয়ার-ভাটা তথা টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণ এখনো পরিশোধ হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, কপোতাক্ষ অববাহিকার দীর্ঘদিনের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১১-১২ অর্থবছরে তালার পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। এ সময় পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ ও সংযোগ খাল খনন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সাল থেকে দুই বছরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৬ বছর ধরে ১৫৬২ একর জমিতে জোয়ার-ভাটা চালু ছিল। সরকার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের ফসল ক্ষতির পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ পর্যন্ত মাত্র ২ বছরের অর্থ প্রদান করা হয়েছে। বাকি ৪ বছরের ৪৮ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা দাবি করে আসছেন।
উত্তরণ ও পানি কমিটির এক জরিপে জানা যায়, টিআরএম চালুর ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ সরাসরি এবং ৪০ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন। নদীর নাব্যতা ফিরে আসে, জীববৈচিত্র্যের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পাখিমারা বিলের জমির মালিকরা দীর্ঘ ৬ বছর কোনো ফসল ফলাতে না পেরে চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ফলে কর্মসংস্থানের সংকট, ঋণগ্রস্ততা ও দারিদ্র্যের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
শ্রীমন্তকাটি গ্রামের গোলদার আশরাফুল হক বলেন, আমরা কপোতাক্ষের বৃহত্তর স্বার্থে জমি দিয়েছি। কিন্তু প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ না পেয়ে এখন অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছি। টিআরএম বিল কমিটির আব্দুল আলীম, রাশেদ সানা ও রেজাউল গাজী বলেন,আমাদের পাওনা ৪৮ কোটি টাকা। এই অর্থ না পেলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষরা আর কখনো টিআরএম প্রকল্পে জমি দিতে আগ্রহী হবে না।
তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন,টিআরএম ছাড়া নদ-নদীর জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। তাই ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি নতুন টিআরএম চালু করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ জেলা সাতক্ষীরা। এখানে নাগরিক অধিকার হিসাবে জমির মালিকরা তাদের প্রাপ্য অর্থ পাওয়ার অধিকার রাখে। তিনি আরও বলেন, পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কপোতাক্ষ নদ আবারও পলিতে ভরাট হয়ে পড়ছে এবং জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অর্থ প্রদান না করা হলে শুধু তালা নয়, আশপাশের বহু অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ডিসি অফিস থেকে তালিকা দিলে আমরা সেই অনুযায়ী অর্থ ছাড় করি। টাকা ছাড় করার পর দায়িত্ব থাকে না আমাদের। ডিসি অফিসে খোঁজ নিলে ভালো হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘যে টাকার বরাদ্দ এসেছিল তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি টাকার জন্য কৃষকেরা আমার কাছে আবেদন দিয়েছেন। আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা যেন দ্রুত তাঁদের পাওনা বুঝে পান, সে বিষয়ে প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
ইতিপূর্বে পাখিমারা টিআরএম বিলের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে বলে জানা গেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

তালায় ২ ঔষধ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার তালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে দুইবিস্তারিত পড়ুন

তালায় পূজামণ্ডপে প্রতিমার ক্ষতিসাধন, প্রশাসনের পরিদর্শন
তালা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কলাপোতা পূর্বপাড়া বটলতা পূজামণ্ডপেবিস্তারিত পড়ুন

তালায় টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্মারকলিপি
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়াবিস্তারিত পড়ুন