ময়নাতদন্তের লক্ষ্যে
আদালতের আদেশে কেশবপুরে নবজাতকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন
খুলনার বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে পোস্টমর্টেমের জন্য সেই নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠান যশোর সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহমুদুল হাসান।
বুধবার সকালে যশোরের কেশবপুর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রাম থেকে এ নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজারের হালিমা মেমোরিমাম নার্সিং হোম ও ডায়াগোনিষ্ট সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু হয় বলে নবজাতকের পিতা হেলাল গাজী বাদী হয়ে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানায় একটি এজহার করেন। ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার মামলার বাদীকে ম্যানেজ করে আদালতে নারাজী আবেদন জমা দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না আসামি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজলার চুকনগর হালিমা মেমোরিয়াল নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের। গত ৩ নভেম্বর মামলার ধার্য্য তারিখে বাদীর আবেদন শুনানী শেষে বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ডুমুরিয়া খুলনার বিজ্ঞ বিচারক আবেদন না মঞ্জুর করে মৃত নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলে পোস্ট মর্টেমের আদেশ দিয়েছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী কেশবপুর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের মোঃ হেলাল উদ্দীন গাজী তার সন্তান সম্ভাবনা স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম (২০) কে চুকনগর বাজারের হালিমা মেমোরিয়াল নার্সিং হোম ও ডায়াগোনিষ্ট সেন্টারে ভর্তি করে। এ সময়ে ক্লিনিক মালিক কথিত ডাক্তার কামাল হোসেন তিনিসহ অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক বরকত উল্লাহ সহ কয়েকজন নার্স ইয়াসমিন বেগমের সিজারিয়ান অপারেশন করে। এসময়ে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। অপারেশন করার সময়ে নবজাতক পুত্রের পেটে ছুরিরাঘাতে কেটে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যায়। তখন তারা শিশুটির কাটা পেট সুপার গ্লু আটা লাগিয়ে জোড়া দিয়ে ক্লিনিক থেকে বের করে অন্য ক্লিনিকে নিতে বলেন। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটি মারা গেলে হাসপাতালের মালিক কামাল হোসেন, নার্স তহমিনা বেগমসহ অন্যরা এ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি না করতে এবং ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।
এক পর্যায়ে মৃত শিশুটির পিতা হেলাল হোসেন গাজী ক্লিনিক মালিক কামাল হোসেনকে প্রধান আসামী করে চিকিৎসক, নার্সসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে গত ৫ অক্টোবর ডুমুরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সাময়িক ভাবে ক্লিনিক বন্ধ রেখে গাঁ ঢাকা দেয়। এরপর এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে একটি কুচক্রী মহল ঘটনার শুরু থেকে ম্যানেজ মিশন নিয়ে মাঠে নামে বলে জানা যায়। একপর্যায়ে তারা মামলার বাদীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে গত ১৫ অক্টোবর নোটারী পাবলিক, খুলনা হতে বাদী ভবিষৎ এ মামলা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নয় মর্মে এ্যফিডেভিট সম্পাদন করে আদালতে আবেদন জানান।
গত ৩ নভেম্বর মামলার ধার্য্য তারিখে বিজ্ঞ আদালত বাদীর আবেদন না মঞ্জুর করে মৃত নবজাতকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পোস্ট মর্টেম করার জন্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, যশোর জেলা প্রশাসক ও যশোর জেলা সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ওই ঘটনার পর গত ৩ নভেম্বর উপজেলার চাকুন্দিয়া গ্রামের বাবুল গাজীর স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করতে যেয়ে ভুল চিকিৎসায় আবারও নব জাতকের মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হত দরিদ্র বাবুল গাজী কোন মামলা মোকর্দমা বা ঝামেলায় জড়াতে চান নাই বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ২০১৫ সালে ওই ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনে ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের আনন্দ দাসের স্ত্রী বুলু রানী দাস মৃত্যুর ঘটনার মামলায় ক্লিনিক মালিক কামাল হোসেন জেল-হাজতে প্রেরিত হন। এ ঘটনায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে একাধিক এনজিও ফরম ও স্থানীয়ভাবে চুকনগরে মানববন্ধন কর্মসূচী হয়।
এছাড়া বিগত দিনে কেশবপুর উপজেলার ভেরচি গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের একজন গৃহবধু, ডুমুরিয়ার সদরের বৃদ্ধ দিন মজুরের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ক্লিনিক মালিক কামাল হোসেন বলেন, আমি মনে করি এনবজাতকের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী নয়। আমিও চাই সত্য ঘটোনা উদঘাটন হোক।
মামলার বাদীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার কথা জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন গরীব মানুষ হওয়ায় আমার পক্ষ থেকে অন্য একজন তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছন কিন্তু আর্থিক সহায়তার পরিমান জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলার পর সাংবাদিকদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, খুলনার বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে পোস্টমর্টেমের জন্য নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠান হয়েছে। সরেজমিন আমি সুরতহাল রিপোর্ট প্রদান করেছি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত আইগত ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)