কয়েক বছরে তাদের সম্পদ বেড়েছে হাজার গুনের বেশি
দুর্নীতির এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের প্রয়োজনে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনসহ ছয়জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
মঙ্গলবার ( ২২ জুন) দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
দুদক সচিব বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রভাবশালী এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুদক অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে তথ্য প্রমাণ উঠে এসেছে। অভিযুক্তরা যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়। দুদকর আবেদনের প্রেক্ষিতেই ছয় জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এই আদেশ দেন। গত ১৩ জুন আদালত থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত কয়েক বছরে ক্যাসিনোকাণ্ডসহ বিভিন্ন উপায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানে হুইপ সামশুল হকের নাম উঠে আসে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এক হাজার ৫৪৬ শতাংশ বেড়েছে বলে অভিযোগ আছে।
এর আগে অনুসন্ধান শুরুর পর ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সামশুল হকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছিল দুদক। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আলোচনায় উঠে আসেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনসহ পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।
দেশজুড়ে জুয়া, ক্যাসিনো বন্ধে শুরু হওয়া র্যাবের অভিযান সম্পর্কে সমালোচনা করে বিতর্কের জন্ম দেন সামশুল হক চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবে জুয়ার আসর বসিয়ে ১৮০ কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ তোলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর অদৃশ্য শক্তির চাপে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। হুইপ সামশুল হক চৌধুরী আবাহনী ক্লাবে জুয়ার আসর বসিয়ে দিনে ছয় লাখ টাকা আয় করেন বলে ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান এবং নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী দাবি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দিদারুলকে হত্যার হুমকি দেন হুইপের ছেলে শারুন। পরে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন দিদারুল।
যুবদল ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগে এসে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন সামশুল হক চৌধুরী। তাঁর সম্পদ বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র ১০ বছরে সামশুল হক চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে অন্তত এক হাজার ৫৪৬ শতাংশ। তিন নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়ে সামশুল ও তাঁর স্ত্রী হয়ে উঠেছেন সম্পদশালী। ২০০৮ সালে নির্বাচনে শ্যালক ও ভায়রার কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা এবং নিজের মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সংসদ নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলেন সামশুল। ওই সময় তিনি এতই দরিদ্র ছিলেন যে তাঁর হাতে নগদ টাকা ছিল মাত্র এক হাজার ৩৬৯ টাকা। আর তাঁর স্ত্রীর কোনো সম্পদ ছিল না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)