জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের জোর করে বোরকা পরাবে না: শফিকুর রহমান


জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের বোরকা পরতে জোর করা হবে—এমন অভিযোগ ‘ভয় দেখানো’র কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে কাউকে কোনো পোশাক পরতে বাধ্য করা হবে না। নারী–পুরুষ সবার নিরাপত্তা, সম্মান ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই হবে তাদের প্রতিশ্রুতি।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুরে রূপসী প্রো-অ্যাকটিভ ভিলেজ রোডে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকার মহানগর উত্তর পেশাজীবী পরিষদ।
নারী অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যোগ্যতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নারীরা দেশগঠনে ভূমিকা রাখবেন। বর্তমানে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান নেই উল্লেখ করে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
নারীদের বোরকা নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মায়েদের ব্যাপারে ভয় দেখানো হয়—জামায়াত ক্ষমতায় এলে সবাইকে একটা করে কালো চাদর পরাবে, শুধু চোখ খোলা রাখবে। ইসলামের বিধানে চোখ খোলা রাখাও আছে আবার মুখ খোলা রাখাও আছে। হ্যাঁ, কেউ যদি চোখও না ঢাকেন, মুখও না ঢাকেন—জামায়াতে ইসলামী কাউকে জোর করে বলবে না। এই কল্যাণ রাষ্ট্রের সৌন্দর্য উপলব্ধি করে, আগ্রহী হয়ে নারীরাই সৌন্দর্যের শালীন পোশাক কবুল করে নেবেন, ইনশা আল্লাহ।’
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, জনগণ যেন বিবেকের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভোট দেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, জামায়াত তাদের অভিনন্দন জানাবে। আর জনগণ জামায়াতকে নির্বাচিত করলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশ পুনর্গঠন করা হবে।
ক্ষমতায় এলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি—তোমাকে লাল কার্ড, সন্ত্রাস—তোমাকে কালো কার্ড।’
রাজনৈতিক নিপীড়নের প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত সাড়ে ১৫ বছর তাকে বাড়ি বাড়ি লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমরা ফাঁসির রশি গলায় নিয়েছি, কিন্তু দেশ থেকে পালাইনি।’ তিনি অভিযোগ করেন, যারা একসময় ‘পালাই না’ বলেছিলেন, এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
নির্বাচন নিয়ে সতর্কতা জানিয়ে তিনি বলেন, পুরোনো ধাঁচের ভোটে দেশের কল্যাণ সম্ভব নয়। ‘নির্বাচনের মতো নির্বাচন’ ছাড়া জনগণের মুক্তি আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘কাদা–ছোড়াছুড়ি’ পরিহার করে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি করার আহ্বান জানান।
১৯৭০ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘৭০-এর ইলেকশনে আমরাই বলেছিলাম ভোট দেন নৌকায়, রাতে দরজা খুলে ঘুমাতে পারবেন।’ কিন্তু আজও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। সৎ নেতৃত্বের অভাবেই দেশকে ‘বাগানের মতো সুন্দর’ করা যায়নি বলে তিনি আক্ষেপ করেন। শোষক-শোষিত মানুষের বিভেদ দূর করার কথাও বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা সংস্কারের দিকে যতবার এগোতে চেয়েছি, কেউ না কেউ আমাদের কোমর ধরে পিছের দিকে টেনে রেখেছে, এটা চাই না, ওইটা চাই না, এটার দরকার নাই, শুধুমাত্র ইলেকশন। নির্বাচন তো আগেও হয়েছে, এই দেশের মানুষকে কল্যাণ এবং মুক্তি তো দিতে পারেনি। নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন। তবে নির্বাচনের মতো নির্বাচন প্রয়োজন। পুরোনো স্টাইলে নির্বাচন দিয়ে দেশে কোনো কল্যাণ কেউ দিতে পারবে না।’
যুবকদের ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রশংসা করে তিনি বলেন, এখনো তাদের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার দেওয়া সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে তাদের মেধার মূল্যায়ন করে দেশগঠনে কাজে লাগানোর অঙ্গীকারও করেন জামায়াত আমির।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ

এসপি পদায়নের লটারি কিভাবে হয়েছে, জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দেশের ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপার পদায়ন করা হয়েছে। লটারি পদ্ধতিতে তাদের নির্বাচনবিস্তারিত পড়ুন

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সবই করা হবে : সিইসি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতিবিস্তারিত পড়ুন

পশ্চিমা চাপ নেই, দিল্লি ও ফ্রান্স নিয়ে মুখ খুললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে কোনোবিস্তারিত পড়ুন

