নিরাপদ সবজি উৎপাদনে যুক্ত ঝিকরগাছার ৮ হাজার কৃষাণ-কৃষাণী
মিঠুন সরকার, নিজস্ব প্রতিনিধি: ফসলের মাঠের পরিবেশ ঠিক রাখতে ও ফসলকে মানব স্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদ করতে জৈব প্রযুক্তির বিকল্প নেই। যশোরের ঝিকরগাছায় প্রায় ৮ হাজার কৃষক কৃষাণী জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
ঝিকরগাছা কৃষি অফিসের বলছে, সবজির এমন কিছু জাত আছে যেগুলো কম উপকরণ ব্যবহার করলেও ভালো ফল দেয় ও রোগ-পোকার আক্রমণ কম হয়। বিশেষ করে স্থানীয় বা দেশি জাতগুলোর এরূপ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এরূপ জাত খুঁজে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে।
নেট হাউস তৈরি করে তার ভেতরে শাকসবজি চাষ করে কীটনাশক ছাড়াই অনেক পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার, সবুজ সার, খামারজাত সার ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
বায়োফার্টিলাইজার (রাইজোবিয়াম, অ্যাজোটোব্যাকটার) ও বালাই দমনে বায়োএজেন্টসমূহকে (ট্রাইকোগ্রামা, ব্রাকন) ব্যবহার করতে হবে। বালাই দমনে বিভিন্ন গাছ-গাছড়া থেকে তৈরি করা বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিছু জৈব কীটনাশককে জৈব কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে যাদের নাম দেয়া হয়েছে ‘গ্রিন পেস্টিসাইড’।
যেমন- নিমবিসিডিন, নিমিন এবং স্পিনোসাড। সাধারণভাবে জৈব কীটনাশকসমূহ অজৈব কীটনাশকের চেয়ে কম বিষাক্ত এবং পরিবেশ বান্ধব। যে তিনটি প্রধান জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা হয় তারা হলো- বি টি (একটি ব্যাক্টেরিয়াল টক্সিন), পাইরিথ্রাম এবং রোটেনন।
অল্প বিষাক্ত জৈব বালাইনাশকসমূহের মধ্যে রয়েছে নিম, সাবান, রসুন, সাইট্রাস ওয়েল, ক্যাপসেসিন (বিতারক), বেসিলাস পোপিলা।
বিউভেরিয়া বেসিয়ানা ইত্যাদি। বালাইনাশকের প্রতি পোকার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার আশঙ্কা থাকায় এসব জৈব বালাইনাশক পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা উচিত।
এগুলোর পাশাপাশি- আগাছা দমনে কোন আগাছানাশক ব্যবহার না করে নিড়ানি ও হাত দিয়ে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আন্তঃফসল ও মিশ্র ফসলের চাষ করতে হবে। শস্য বহুমুখীকরণ করতে হবে।
হিসাব করে সবজির বপন বা রোপণ সময় আগাম বা নাবি করতে হবে। যুক্তিসঙ্গতভাবে সেচ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। প্লাবন সেচ না দিয়ে ঝাঝরি দিয়ে বা কলসি ভরে পানি গাছের গোড়ায় ঢেলে সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে খরার সময় মালচিং করতে হবে। পরিণত হওয়ার সূচক মেনে অর্থাৎ উপযুক্ত সময়ে সবজি তুলতে হবে।
শাকসবজি তোলার পর তা ধোয়া বা পরিষ্কার করার জন্য জীবাণুমুক্ত পানি ব্যবহার করতে হবে। বাছাই করে জীবাণুযুক্ত বা পচন ধরা শাকসবজি আলাদা করে বাদ দিয়ে প্যাকিং করতে হবে। প্যাকিং সামগ্রী জীবাণুমুক্ত হতে হবে। যতটা সম্ভব ক্ষেত থেকে শাকসবজি সংগ্রহের পর দ্রুত বাজারজাত করতে হবে। শাকসবজি খাওয়ার আগে জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে কাটতে হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের বোধখানা গ্রামের কৃষক আব্দুল বারেক জানান, বিভিন্ন ধরনের ফেরেমন ফাঁদ ও হলুদ আঠা যুক্ত কাগজ ক্ষেতে ঝুলিয়ে রেখেছি। তার পর থেকে আমার আর দামী দামী কীটনাশক স্প্রে করা লাগেনা। আমাদের ফসল ৯০ ভাগ নিরাপদ বলা যায়। ৫ নং পানিসারা ইউনিয়নের বর্নি গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া জানান, আমরা নিরাপদ পেপে উৎপাদন করি। কোন রকম বিষ ছাড়াই। বিভিন্ন গাছের ফল, সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করে।
ঝিকরগাছা উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে আমাদের একটি নিরাপদ সবজী উৎপাদনের মডেল প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেখান থেকে দেখে আশে পাশের কৃষক উদবুদ্ধ হচ্ছে ও আমাদের থেকে পরামর্শ নিচ্ছে, লাভবান ও হচ্ছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন,’কম খরচে ও নিরাপদে ফসল উৎপাদনে জৈব কৃষি প্রযুক্তির বিকল্প নেই। বর্তমানে আ্মরা প্রায় ৮ হাজার কৃষক-কৃষাণীর মাঝে জৈব প্রযুক্তি সম্প্রসারণে সফল হয়েছি। এ সংখ্যা ধীরে ধীরে আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)