সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

প্রতিটি শিশু হোক সাবলীল পাঠক

প্রতিটি শিশু হোক সাবলীল পাঠক

কাজী গুলশান আরা

প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সব শিশুকে সাবলীল পাঠক হিসেবে গড়ে তোলা। একটি নির্দিষ্ট পাঠ শুদ্ধ উচ্চারণ ও দাঁড়ি-কমা, যতিচিহ্ন ইত‍্যাদির যথাযথ ব‍্যবহার করে পড়ে যাওয়ার ব‍্যবস্থাকে পঠন বলা হয়। মাইকেল বেস্টেরের মতে, ‘পঠন হচ্ছে দৃশ‍্য ধ্বনি উৎপাদন অর্থোপলব্ধির মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া।’ শুধু কোনো পাঠ পড়ে গেলেই হয় না, তার অর্থ উপলব্ধি করতে না পারলে পঠনকার্য সফল হয় না। পঠনের সঙ্গে পাঠকের পর্যবেক্ষণ, চিন্তাধারা এবং অভিজ্ঞতা নিহিত থাকতে হবে। আর সাবলীল পঠন বলতে আমরা বুঝি শিশুর বয়স, সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী তার শ্রেণির বাংলা বই ও শ্রেণি উপযোগী সম্পূরক পঠনসামগ্রী অর্থ বুঝে পড়তে পারা। সাবলীল পঠনের শর্তগুলো হচ্ছে—বর্ণ, শব্দ ও বাক্য সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারা, শুদ্ধ ও স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারা, স্বাভাবিক গতিতে পড়তে পারা, পঠিত বিষয়ের মর্ম বুঝতে পারা, বিরামচিহ্ন ব্যবহার করে, স্বরাঘাত ও স্বরভঙ্গি বজায় রেখে পড়তে পারা। অন্য কথায়, লিখিত কোনো কিছু কারও কোনো রকম সাহায্য ছাড়া অর্থ বুঝে, বিরামচিহ্ন ঠিক রেখে সাবলীলভাবে পড়তে পারার ক্ষমতাকে পঠনদক্ষতা বলা যেতে পারে। মানসম্মত পঠনদক্ষতা হলো প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি বয়সী শিশুদের প্রতি মিনিটে ৪৫ থেকে ৬০টি শব্দ পড়ে তার অর্থ বুঝতে পারা।

কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এই সাবলীলতায় বেশ ঘাটতি দেখা যায়।বিশেষ করে করোনাকালে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে পারেনি। যদিও সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং শিক্ষকেরা অনলাইন-অফলাইনে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যুক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তথাপি দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়।এর ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পঠনদক্ষতা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়।সেই অবস্থা থেকে এখনও উত্তরণ সম্ভব হয়নি। বরং সাবলীল পঠনদক্ষতা এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম বাহন মাতৃভাষা। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিশুদের বাংলায় পঠনদক্ষতা প্রত্যাশিত মানে পৌঁছাতে পারছে না।বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে না। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চেয়েও বেশি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও কেন আমাদের শিশুরা বাংলা সাবলীলভাবে পড়তে পারে না, এটাই মুখ্য প্রশ্ন।

বাংলা বিষয়ে ভালোভাবে পড়তে না পারলে বাংলায় লিখিত অন্যান্য বিষয়, যেমন প্রাথমিক গণিত, প্রাথমিক বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়েও তারা সাবলীলভাবে পড়তে পারবে না। ফলে প্রতিটি বিষয়েই তাদের ঘাটতি থেকে যাবে এবং ওই সব শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় আগ্রহও থাকবে না।তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সাবলীল পাঠক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যান্ত জরুরি।

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে সাবলীল পাঠক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ গুরুত্বপূর্ণ:
১.সাবলীল পাঠক তৈরিতে বর্ণজ্ঞান একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সামর্থ্য।তাই শিশুকে অবশ্যই প্রতিটি বর্ণের প্যাটার্ন বা অবয়ব,নাম ও ধ্বনি জানতে হবে।
২.কারচিহ্ন ও যুক্তবর্ণ না চেনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পড়তে পারেনা। তাই পড়ার দক্ষতা অর্জনে এগুলো চেনা ও উচারণ জানা অপরিহার্য।
৩.অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠে পিছিয়ে যায়। তাই তাদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে হবে এবং প্রতিদিনের পাঠ প্রতিদিন আয়ত্ত করতে হবে।
৪.পাঠের অর্থ অনুধাবন করতে না পারলে তা মনে থাকে না। এজন্য শিক্ষার্থীকে বিষয়বস্তুর মর্ম উপলদ্ধি করতে হবে।
৫.শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান ও পরিচিত বিষয়ের ধারণার সাথে মিল রেখে নতুন পাঠ বা ধারণা উপস্থাপন করতে হবে।
৬.শিক্ষার্থীর নিকট পাঠকে আকর্ষণীয় করার জন্য পাঠসংশ্লিষ্ট উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
৭.গল্প,কবিতা,নাটক,অভিনয় প্রভৃতির মাধ্যমে পাঠের প্রতি কৌতুহল সৃষ্টি করতে হবে।
৮.শিক্ষার্থীদের মাঝে শ্রেণি উপযোগী SRM সরবরাহ করতে হবে। সাবলীল পাঠক তৈরিতে SRM অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৯.শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠচক্র ও বই পড়ার আসরের আয়োজন করতে হবে।মাঝে মাঝে পাঠ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০.প্রতিটি পাঠ পড়ার পরে নিজের ভাষায় বলতে দিতে হবে।
১১.পারগ ও অপারগ শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে দল গঠন করে ও জোড়া গঠন করে বারবার অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে হবে।
১২.প্রতি তিন মাস অন্তর বেইজ লাইন সার্ভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পাঠগত অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে।
১৩.শিক্ষার্থীদেরকে নিবিড় তত্ত্বাবধান ও ব্যক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে সাবলীল পাঠক হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়,শিশুর সার্বিক বিকাশ ও মঙ্গল সাধনের জন্য পড়ার দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম।শিশুর ব্যক্তিগত অর্জন,সামাজিক উন্নতি কিংবা শিক্ষায় সাফল্য সর্বোপরি ভবিষ্যত পেশাজীবনে উন্নতির পিছনে পড়া দক্ষতা ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগের জন্য নাগরিক হিসেবে সবার পড়ার দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য। তাই প্রতিটা শিশু যাতে সাবলীল পাঠক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

লেখক:
কাজী গুলশান আরা
শিক্ষক।

একই রকম সংবাদ সমূহ

২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এসএসসির ফল প্রকাশ

আগামী জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলেবিস্তারিত পড়ুন

সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেবহাটার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘দরদি’র নতুন কমিটি গঠন

দেবহাটা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থীদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন দরদি’র ১১৯ সদস্য-বিশিষ্টবিস্তারিত পড়ুন

ফেসবুকে এবং কিছু মিডিয়া চামড়ার দাম নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে: বানিজ্য উপদেষ্টা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমবিস্তারিত পড়ুন

  • করোনা প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানতে হবে ৫ নির্দেশনা
  • যে কৌশলে বুদ্ধিজীবী তদবির করেছিলেন, প্রকাশ করলেন শিক্ষা উপদেষ্টা
  • বাজেটে স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের জন্য সুখবর
  • কলেজ নয়, সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ
  • ঈদের আগে সুখবর পাচ্ছেন পৌনে চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী
  • এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়লো
  • তালার দেওয়ানীপাড়া স্কুলের ছোটবন্ধুরা পেলো ‘আমরা বন্ধু’র উপহার
  • এইচএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে ৩৩ নির্দেশনা
  • সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি নির্দেশনা
  • সচিবালয় অভিমুখে শিক্ষকদের পদযাত্রায় পুলিশের বাধা
  • ডিগ্রি পরীক্ষার প্রথম বর্ষের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৮৮.৮০ শতাংশ