ভাস্কর্যের বদলে ‘মুজিব মিনার’ চান কওমির হুজুররা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বদলে ‘আল্লাহর ৯৯ নাম’ খচিত ‘মুজিব মিনার’ নির্মাণ করতে বলছেন কওমি মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষস্থানীয় আলেমরা।
পাশাপাশি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে অবমাননায় সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা এবং ওয়াজ মাহফিলে মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াসহ আরও কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন তারা।
মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইড়পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তার বিরোধিতা শুরু করেন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনের জোট হেফাজতে ইসলামের নেতারা। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, লেখক-অধ্যাপক, শিল্পী-সাহিত্যিকরা। ভাস্কর্যবিরোধীদের শাস্তি দাবিতে প্রতিদিন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করে তারা বলছেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির উত্তরসূরিরা জিঘাংসা থেকে জাতির জনকের ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন।
বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য থাকার বিষয়টিও সামনে তুলে আনছেন তারা।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার কওমি মাদ্রাসার শীর্ষস্থানীয় আলেমরা বিষয়টি নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় আলোচনায় বসেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়।
বৈঠকের পর বেফাকের মহাসচিব মাহফুজুল হক বলেন, “বৈঠকে অংশ নেওয়া আলেমদের মতামতের ভিত্তিতে ৫ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সেগুলো স্মারকলিপি আাকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “মানবমূর্তি বা ভাস্কর্য যে কোনো উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামের দৃষ্টিতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ৯০ শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত দেশের মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত উত্তম কোনো বিকল্প সন্ধান করাই উত্তম।”
বিকল্প কী হতে পারে জানতে চাইলে মাহফুজুল হক বলেন, “আমাদের প্রস্তাব আল্লাহর ৯৯ নাম খচিত মুজিব মিনার নির্মাণ করা হোক।”
আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে হাটাজারী মাদ্রাসার প্রতিনিধি মুফতি জসীমুদ্দিন, মাওলানা নূর হোসেইন কাশেমীর প্রতিনিধি নাজমুল হাসান, খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আল্লামা আবদুল হালিম বুখারী, মুফতি রুহুল আমীন, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী, আল্লামা আব্দুল হামিদ মধুপুর পীর সাহেব, আল্লামা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি মনসুরুল হক মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা আবদুল মতিন বিন হুসাইন, মাওলানা মাহফুজুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তাদের ৫ দফা হুবহু তুলে ধরা হল-
# ভাস্কর্য যে উদ্দেশ্যে তৈরি হোক তা ইসলামের নিষিদ্ধ। ভাস্কর্য তৈরি না করে ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাসের আলোকে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত বিকল্প পথ বের করতে হবে।
# বিশ্বনবীর অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারিসহ দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
# ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত আলেমদের মুক্তি দিতে হবে।
# ওয়াজ মাহফিলে মাইক ও লাউন্ড স্পিকার ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে।
# উসকানিমূলক ও অবমাননাকর মন্তব্য কঠোরভাবে নজরদাবি করতে হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)