শ্যামনগরে বদ্ধ পানি ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ


জলোচ্ছ্বাসের সময়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়া জোয়ারের পানি নিস্কাশনে অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ডুবে থাকা মিষ্টি পানির পুকুর ও জলাশয়ের মরা মাছ পঁচে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বদ্ধ হয়ে পড়া লবন পানিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়ায় প্লাবিত অংশের মানুষের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বদ্ধ পানি নিস্কাশনসহ মরা মাছ অপসারনের উদ্যোগ না নিলে তীব্র গরমের মধ্যে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী, জয়াখালীসহ পদ্মপুকুরের সোনাখালী ও চন্ডিপুর এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙন কবলিত বাঁধের কয়েকটি অংশ বাঁধা হলেও ভিতরে আটকে পড়া জোয়ারের লবন পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যার কারনে প্লাবিত এসব এলাকার শত শত মিষ্টি পানির পুকুর ও জলাশয় বেশ কয়েক দিন ধরে জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। ফলে বদ্ধ লবণ পানিতে ডুবে থাকা পুকুর, দিঘীসহ মৎস্য প্রকল্পসমুহের বিভিন্ন প্রজাতির শত শত মন মিষ্টি পানির মাছ মরে পঁচে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া দুষিত বদ্ধ পানির কারনে স্থানীয়রা পেটের পীড়া, চুলকানি, পাঁচড়াসহ নানা ধরণের চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও জানান।
সোনাখালী গ্রামের আনিছুর রহমান জানান, বুধবার জলোচ্ছাস হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারের সময় তাদের এলাকার মিষ্টি পানির পুকুরগুলো ডুবে যায়। দুই দিনেও বদ্ধ হয়ে পড়া সে লবন পানি অপসারনের কোন ব্যবস্থা না নেয়াতে শুক্রবার থেকে ঐ এলাকার ডুবে থাকা পুকুরগুলোর মাছ মরতে শুরু করে। শনিবার সকাল থেকে ছড়াতে থাকা মাছসহ জলজ প্রাণি পঁচার দুর্গন্ধ দুপুরের পর মারাত্মক আকার ধারন করে।
খুটিকাটা গ্রামের আয়েশা বেগম জানান, গোটা এলাকা বদ্ধ পানিতে তলিয়ে থাকায় পুকুরগুলোর মরা মাছ ঢেউয়ের তোড়ে তাদের বাড়ির পাশে এসে আটকে যাচ্ছে। তীব্র দুর্গন্ধে টিকতে পারছে না-জানিয়ে ঐ গৃহবধু বলেন, তার তিন ছেলে মেয়ের সবাই বাতাসে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধের কারনে ভাত পানি খাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছ।
‘পানিতে নামলেই শরীরে চুলাকানা হচ্ছে’- উল্লেখ করে পরাপুর গ্রামের সকিনা খাতুন বলেন, আমার তিন বছরের ছেলের হাতে পায়ে লাল লাল দাগ হয়ে ফুঁেল গেছে। জরুরী প্রয়োজনে পর্যন্ত ত্রাণের পানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন চারদিন ধরে পরিবার নিয়ে পানিবন্দি অবস্থায় থাকা এ নারী।
কৈখালী গ্রামের মনির হোসেন জানায়, বদ্ধ পানি দুষিত হওয়ায় তিনি নিজেসহ পরিবারের ছয় সদস্যের সবাই দুই দিন ধরে ডায়ারিয়াতে আক্রান্ত। এলাকা এখনও পানি বদ্ধ হয়ে থাকায় মরা মাছের দুর্গন্ধে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায় ভাঙন কবলিত পদ্মপুকুরের ঝাঁপা, গাবুরার তিন নম্বর ও কৈখালীর জয়াখালীসহ এলাকার বাঁধ হাজারও গ্রামবাসী মিলিতভাবে বেঁধেছে। কিন্তু জোয়ারের সময় ঢুকে পড়া পানি আটকে গেলেও তা নিস্কাশনে কারও কোন উদ্যোগ নেই। বদ্ধ পানির কারনে মরা মাছ পঁচে সমগ্র এলাকাকে অসহনীয় করে তুলেছে। এছাড়া জলোচ্ছাসের কারনে ডুবে যাওয়া টিউবওয়েলগুলো পরিস্কার না করায় তার পানি ব্যবহারের অনেকে ডায়ারিয়াসহ বিভিন্ন পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
কৈখালীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, দ্রুত বদ্ধ পানি অপসারনের ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা ভয়ংকর অবস্থায় পৌছে যেতে পারে। শ্যালো দিয়ে হলেও আটকে পড়া পানি অপসারনসহ জলমগ্ন মিষ্টি পানির জলাশয়গুলো পরিস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ বিপ্লব কুমার দে বলেন, মরে পঁেচ যাওয়া মাছের দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে খাবারের অরুচিসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরী করে। বদ্ধ পঁচা পানির সংষ্পর্শে গেলে চর্ম রোগে আক্রান্ত হতে হবে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
