গোলাপী লবণের স্বাস্থ্য উপকারিতা
খাবারকে সুস্বাদু করে এমন একটি লবণ হলো হিমালয়ান পিংক সল্ট। এটি এক প্রকার খনিজ লবণ।পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ লবণ এটি, যা টক্সিনমুক্ত। হোয়াইট গোল্ড নামেও পরিচিত এটি। এ লবণ দেখতে গোলাপি বর্ণের, কারণ লাল, সাদা ও গোলাপি বর্ণের খনিজ উপাদান মিশ্রিত থাকে। অন্যান্য লবণের চেয়ে এ লবণের পুষ্টিগুণ অত্যাধিক। এ লবণ খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, কারণ এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। হিমালয় গোলাপী নুন হলো গোলাপী রঙের নুন যা দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয় পর্বতমালার কাছে পাওয়া যায়।
হিমালয় নুনকে সাধারণ নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের স্বাস্থ্যকর বিকল্প বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। শিলা লবণের মতো খনন করা হলেও হিমালয় গোলাপী লবণ প্রযুক্তিগতভাবে একটি সমুদ্রের লবণ ও অধিক স্বাস্থ্যকর। আমাদের জৈবিক প্রক্রিয়াগুলির জন্য লবণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হিমালয় গোলাপী লবণ নিয়মিত লবণের বিকল্প হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, কারণ এটি শরীরের গ্রহণের জন্য কম চাপযুক্ত।
গোলাপি লবণের ইতিহাস
লক্ষ লক্ষ বছর আগে এভারেস্ট থেকে একপ্রকার যৌগ এসে মিশে যায় সমুদ্রের জলে। দীর্ঘদিন ধরে সেটা জমতে শুরু করে। জমতে জমতে ভারি গোলাপি ক্রিস্টাল কণায় পরিণত হয়। এর মধ্যে পটাশিয়াম, সালফেট, জিঙ্ক, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা প্রভৃতি ছাড়াও ৮৪ রকমের খনিজ রয়েছে। ফলে এর গুণাগুণ ও অনেক বেশি।
পুষ্টি উপাদান
হিমালয় গোলাপী নুনে সাধারণ লবণের চেয়ে কম সোডিয়াম থাকে। সাধারণ লবণের প্রতি চা চামচে ২৩৬০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে, যেখানে হিমালয় গোলাপী লবণের এক চা চামচ ১৬৮০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে যা প্রায় এক তৃতীয়াংশই কম। হিমালয় গোলাপী লবণের মধ্যে সাধারণ লবণের পরিমাণ মতো খনিজ থাকে যা অন্তর্ভুক্ত দস্তা, আয়রন, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম।
হিমালয় গোলাপী লবণের স্বাস্থ্য উপকারিতা
হিমালয় গোলাপী লবণের মধ্যে খনিজগুলি থাকতে পারে যা সাধারণ লবণে থাকে না, এই খনিজগুলি কেবল খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যমান।অনেকে বিশ্বাস করেন যে লবণ থেরাপি, যা লবণের সাথে আক্রান্ত বাতাসের শ্বাসকষ্ট জড়িত, দীর্ঘস্থায়ী বাধাজনিত পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডির মতো শ্বাস প্রশ্বাসের অবস্থার জন্য উপকারী। যদিও এই বিষয়ে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন, বিজ্ঞানীরা সিওপিডির সাথে উত্তরদাতাদের যারা শুকনো লবণের ইনহেলার ব্যবহার করেছিলেন তাদের প্রশ্নের উত্তরপত্র গুলিতে পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য উন্নতি পেয়েছেন।
তাছাড়াও এটি যা যা উপকার করে-শরীরে পানির মাত্রা বজায় রাখে। পানির সাথে রোজ খেলে শরীরে মিনারেল এর ঘাটতি পূরণ করে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। এই লবণ পানি কোষে PH মাত্রা বজায় রাখে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। সাইনাসের সমস্যা কমিয়ে দেয়। শরীরে বিভিন্ন জয়েন্ট বা গাঁট-কে সুস্থ রাখে। হাঁড় ভালো রাখে।হজমশক্তি বাড়ে। যাদের হঠাৎ মাসল ক্র্যাম্প হয় সেটা কমাতেও খুব সাহায্য করে। এটি ত্বকের বলিরেখা কমায়।শরীর থেকে টক্সিন বার করে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ দেহে পর্যাপ্ত ও ভারসাম্য হাইড্রেশন স্তর বজায় রাখার জন্য লবণ প্রয়োজনীয়। হারানো জল এবং লবণের ফলে পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য বিশেষত জোর চর্চা করার আগে বা পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে নুন পাওয়া দরকার যা হাইপোনেট্রেমিয়া নামে পরিচিত।যদিও এখানে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, বিশ্বাস করা হয় যে লবণের সাথে একজিমার মতো বিভিন্ন ত্বকের অবস্থার জন্য বেশ কয়েকটি উপকারী প্রভাব রয়েছে, তবে এটি যেখান থেকে উত্তোলন করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। জাতীয় একজিমা অ্যাসোসিয়েশন একজিমা ফ্লাওয়ার্স-এর জন্য ত্রাণ হিসাবে গোসলের পানিতে এক কাপ নুন যুক্ত করার পরামর্শ দেয়।
কিভাবে খেলে উপকার পাবেন?
সাধারণ লবণ থেকে সন মিনারেল বের করে ফেলে দেয়া হয় কিন্তু মিনারেল এর ঘাটতি মেটাতে পিংক সল্ট এর উপকারিতা খুব বেশি। হিমালয়ান সল্ট এর জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত। শুধু এ দেশেই নয়, বিদেশেও বহু মানুষ এই নুন মিশ্রিত জল খেয়ে উপকার পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন। সকালে খালিপেটে এই জলের উপকারিতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা বানানোর একটা পদ্ধতি রয়েছে। দেখে নিন কীভাবে বানাবেন এই লবন পানি। একটি পরিষ্কার কাঁচের বা মাটির বোতলে ফুটানো পানি নিয়ে সেটা ঠান্ডা করে নিন।ঠান্ডা হলে তাতে পরিমাণ মতো হিমালয়ান লবন ঢেলে দিন।২৪ ঘণ্টা রেখে দিন। যখন দেখবেন লবণ আর পানিতে গুলে যাচ্ছে না তখন বুঝবেন আপনার সলিউশনটি প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়েছে।পড়ে থাকা লবণ ছেঁকে নিন, লবণ পানি ফ্রিজে রেখে দিন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালিপেটে এই পানি থেকে এক চামচ নিয়ে তা এক গ্লাস পরিষ্কার পানিতে মিশিয়ে খান।
লেখকঃ
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,
পুষ্টিবিদ, সাংবাদিক ও কলেজ শিক্ষক,কুমিল্লা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)