করোনায় উদ্যোক্তা বনে গেছেন ঢাবি ছাত্রী নির্জনা
বর্তমানে অনলাইন মাধ্যমে নিজের ব্যবসায়িক পরিচিতি গড়ে তোলা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও তরুণরা ইন্টারনেটের এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা বনে যাচ্ছেন। আজ এমনই একজন সফল উদ্যোক্তাকে জানবো।
ফাতেমা ফারজানা নির্জনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনার ছুটিতে নিজ জেলা মেহেরপুরে থেকেই ‘নির্জনশৈলী’ নামে অনলাইনে নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। শাড়ি এবং পাঞ্জাবি নিজের হাতে পেইন্ট করেন। এছাড়া কুশিকাটার পণ্য নিয়েও তিনি কাজ করেন। বিস্তারিত জানবো তার মুখ থেকেই।
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন শেখ শাকিল হোসেন
প্রতিবেদক: উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ কিভাবে তৈরি হলো?
নির্জনা: করোনাকালীন পরিস্থিতে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা, এবং একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা মাথায় আসছিলো। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি তে ঝোঁক ছিলো। তাই কাগজের ক্যানভাস থেকে একটু সরে এসে কাপড়কে ক্যানভাস বানিয়ে আঁকতে শুরু করলাম। এখান থেকেই হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ি-পাঞ্জাবির কথা মাথায় আসলো, এরপর থেকেই শুরু।
প্রতিবেদক: কখন থেকে যাত্রা শুরু এবং কিভাবে?
নির্জনা: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ এ অনলাইন পেজ খুলেছিলাম, নিজের নামেই নাম দিই, নির্জনশৈলী। সেখান থেকেই শুরু, তারপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রতিবেদক: আপনার ব্যবসা প্লাটফর্ম কিভাবে পরিচালনা করেন?
নির্জনা: ফেসবুকে আমার ব্যবসায়িক পেজ রয়েছে। নাম নির্জনশৈলী-Nirjonshoili (https://www.facebook.com/Nirjonshoili)।
প্রতিবেদক: এটা শুরু করতে গিয়ে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন?
নির্জনা: প্রথম দিকে লেখাপড়ার ক্ষতি হবে বলে বাবা মা তেমন সাপোর্ট করেননি। সেই সাথে কাঁচামাল কেনার জন্য পর্যাপ্ত টাকা ও ছিলো না। তবে সময় পরিকল্পনা ও পরিশ্রম দিয়ে সব টা আস্তে আস্তে সামলে নিয়েছি।
প্রতিবেদক: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলুন।
নির্জনা: নির্জনশৈলী কে হ্যান্ড পেইন্টেড পাঞ্জাবির একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।
প্রতিবেদক: যারা নতুন নতুন উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলবেন?
নির্জনা: উদ্যোক্তা হতে হলে, সবার আগে খুব সাহসী একটা মনোবল থাকতে হবে। কারণ এই পথে অনেক উত্থান পতন আসবে, সব টা সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে,ভেঙে পড়লে চলবে না। আর প্রথম দিকে খুব কম পরিমান লাভ রেখে সেল শুরু করতে হবে। সর্বোপরি সৎ ভাবে কাজ করলে এবং পণ্যের কোয়ালিটি ঠিক থাকলেই সফল উদ্যোক্তা হওয়া যাবে।
প্রতিবেদক: পরিবার থেকে কোন উৎসাহ কিংবা বাঁধা পান কিনা?
নির্জনা: প্রথম দিকে কিছু বাধা পেলেও, এখন ব্যবসা এবং লেখাপড়া সব ঠিকঠাক সামলে নিতে পারি দেখে, বাবা মা উৎসাহই দেয়।
প্রতিবেদক: প্রতিমাসে কি পরিমাণ সেল হচ্ছে আপনার?
নির্জনা: প্রতি মাসে ২৫০০০-৩৫০০০ টাকার সেল হয়।
প্রতিবেদক: পণ্য ডেলিভারিতে নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়? কি রকম সেটা?
নির্জনা: আমার জেলা মেহেরপুর। এখানকার কুরিয়ার সার্ভিস গুলো খুবই ভালো। তাই খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না। আমি বেশিরভাগ সময় ই সুন্দরবন কুরিয়ার প্রিফার করে থাকি। সুন্দরবন কুরিয়ার খুব কম সময়েই ডেলিভারি দেয়। তবে দেশের সব জায়গায় ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধা থাকলে আরো ভালো হতো।
প্রতিবেদক: কত টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন আর এখন পুঁজি কত?
নির্জনা: ৬০০০ টাকা দিয়ে ব্যাবসা শুরু করেছিলাম। আর এখন ওভাবে পুঁজি বলতে খুব বেশি না, কারণ আমার প্রোডাক্ট গুলো, আমি স্টক করি না, প্রি অর্ডার নিই, এডভান্স নিই, তার ৮-১০ দিন পর প্রোডাক্ট ডেলিভারি করি। তাই এখানে প্রোডাক্ট প্রতি পুঁজি এবং লাভ আসে।
প্রতিবেদক: এ পর্যন্ত কাজের কোন স্বীকৃতি পেয়েছেন?
নির্জনা: উল্লেখযোগ্য কোনো পুরস্কার না পেলেও, স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদনে নির্জনশৈলী ভিডিও চিত্র আকারে প্রকাশ পেয়েছে, সেই সাথে সুধীজনদের অনেক দোয়া ও ভালোবাসা পেয়েছি। তবে আমার মনে হয়, নতুন উদ্যোক্তা দের জন্য সরকারের তরফ থেকে কিছু সম্মাননা দেওয়া প্রয়োজন, তাহলে তারা কাজে আরো বেশি উৎসাহ পাবে।
প্রতিবেদক: আপনার লাখ টাকার বিক্রির অনুভূতি কেমন?
নির্জনা: অনলাইনে লাখ টাকার সেল, ব্যাপার টা বেশ কঠিন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ৩ মাসে এই টারগেট অতিক্রম করেছি এবং বর্তমানে ২ লাখ টাকার সেল অতিক্রম করেছি। প্রথম দিকে লাখ টাকা সেল ব্যাপার টা অবিশ্বাস্য লাগতো, কিন্তু পরে সবার দোয়াই আমিও এই টারগেট অতিক্রম করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
প্রতিবেদক: ক্যারিয়ার হিসেবে কি ই-কমার্সকেই বেঁচে নিবেন? হ্যাঁ হলে কেন?
নির্জনা: সবাই যদি চাকরির পিছনে ছুটি, তাহলে চাকরি দেওয়ার মানুষ থাকবে না। তাছাড়া আমাদের মতো জনসংখ্যা বহুল উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির জন্য ই-কমার্সের গুরুত্ব কতখানি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই নিজেদের স্বাবলম্বনের জন্য অনলাইন বিসনেস খুবই যুগোপযোগী একটা কর্মক্ষেত্র। তাছাড়া এখানে আমার নিজের ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর সুযোগ আছে বিধায়, ব্যাপার টা আমি খুবই এনজয় করি। আমার ব্যাবসার প্রতিটা পাঞ্জাবি আমি নিজে ডিজাইন করি, যেখানে আমার সৃজনশীলতা প্রকাশের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আজ আমার মনে হয় ক্যারিয়ার হিসেবে সেই পেশাকেই বাছাই করা উচিত, যেখানে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে। আর পেইন্টিং এ আমি নিজের স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাই। তাই ভবিষ্যতে আমার এই উদ্যোক্তা জীবনকেই কন্টিনিউ করার ইচ্ছা আছে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
প্রতিবেদক: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য।
নির্জনা: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
ছবিতে..
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)