নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী তীর্থক্ষেত্র তাঁরক গোঁসাইয়ের বাড়ি সেজেছে অপরুপ সাজে
নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী তীর্থক্ষেত্র তাঁরক গোঁসাইয়ের বাড়ি সেজেছে অপরুপ সাজে। বাংলা কবিগানের অন্যতম পথিকৃৎ কবিয়াল তাঁরক গোসাইয়ের ১০৮ তম তিরোধান দিবস শনিবার। এ উপলক্ষে নড়াইলের লোহাগড়ার কবিধাম জয়পুর গ্রামে দু’দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান মালার মধ্যে রয়েছে শনিবার শুভ অধিবাস ও রবিবার মহোৎসব। তিরোধান দিবস কে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকার ভক্ত অনুরাগী কবিধাম জয়পুর গ্রামে আসতে শুরু করেছেন। গোঁসাইবাড়ি সেজেছে অপরুপ সাজে। এ উপলক্ষে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুুর গ্রামের ‘গোঁসাইবাড়ি’ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী তীর্থক্ষেত্র। গোঁসাইবাড়ি দেশের মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে অতি পরিচিত ও পূজনীয় নাম। এমন কোন মতুয়া খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি লোহাগড়ার জয়পুর গ্রামের গোঁসাই বাড়ি দর্শন করেন নাই। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জীবন্ত কিংবদন্তী এই গোঁসাই বাড়ি।
ইতিহাস থেকে জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। ছোট, শান্ত ও শীর্ণকায় বহমান নবগঙ্গা নদীর উত্তর-পশ্চিম পাড়ে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গোঁসাইবাড়ি। লৌকিক সংস্কৃতির লীলাভূমি এই গোঁসাইবাড়ি। আর এই জয়পুর গ্রামে বাংলা ১৯৫২ সালের ১৫ অগ্রহায়ণ অমাবস্যা তীথিতে জন্মগ্রহণ করেন মতুয়া ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু যোগসিদ্ধ মহাপুরুষ তারক চন্দ্র সরকার। ভক্তকুলে তিনি ‘তারক গোঁসাই’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ছিলেন।
তার পিতার নাম কাশীনাথ সরকার ও মাতার নাম অন্নপূর্ণা সরকার। কাশিনাথ ছিলেন একজন পেশাদার শিল্পী। কবিগান গেয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। এজন্য তিনি কবিগানের একটি দল গড়ে ছিলেন। এ গান গেয়ে তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু কাশীনাথ ও অন্নপূর্ণার ঘরে কোন সন্তান ছিল না। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। দীর্ঘদিন ধরে কোন সন্তান-সন্ততি না থাকায় কাশীনাথ ‘পুত্রেষ্টী’ যজ্ঞ করেন এবং পরবর্তীতে অন্নপূর্ণার গর্ভে তারক গোসাই জন্মগ্রহণ করেন।
তারক গোঁসাই ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। সুদর্শন ও সৌম্যকান্তি তারক গোঁসাই বাল্যকাল থেকেই মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। গায়ক পিতা কাশিনাথ কথনোই চাননি, তারক গায়ক হোক। তিনি চেয়ে ছিলেন, সে লেখাপড়া শিখে অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত হোক। এজন্য তারককে পাশের গ্রাম ছাতড়ার পাঠশালাই ভর্তি করা হয়।
কাশীনাথের বাড়ির সামগ্রীক পরিবেশ পরিস্থিতি ও অন্য কবিয়ালদের আগ্রহে ছোট বেলা থেকেই তারক গোঁসাই সংগীতের সাথে জড়িয়ে পড়েন। আশে পাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তার গানের সুনাম। তিনি বহু কবিগান ও কবিতা রচনা করে ছিলেন। এতদাঞ্চলের নিম্নবর্ণের মানুষের কাছে তিনি ‘দেবদূত’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
পিতা কাশীনাথ মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন তাঁরক গোঁসাই। পুরোপুরি লেগে পড়েন কবিগানের দল নিয়ে। নিজেই দল গড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে কবিগান গাইতে শুরু করেন। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে কবিয়াল তারক গোঁসাইয়ের নাম ও খ্যাতি।
তিনি শুধু কবিগানই গাইতেন না, তিনি অজগ্র কবিগান রচনা করেছিলেন। নিজের লেখা কবিগান গুলো সুর দিয়ে ছন্দের তালে হৃদয়গ্রাহী করে তোলেন। অপূর্ব সুরের জাদুকরী কন্ঠের অধিকারী ছিলেন তারক গোঁসাই। কবিগানের অন্যতম দিকপাল তারক গোঁসাই রচিত কবিতা ও কবিগানের সংখ্যা দু’সহগ্রাধিক। বাংলা ১৩২১ সালের ১৭ ফাল্গুন শিব চতুদর্শীর রাতে তাঁরক গোসাই ইহলোক ত্যাগ করেন।
কবি রসরাজ তাঁরক গোঁসাই এর স্মৃতি বিজড়িত জয়পুর পরশমনি মহা শশ্মান ও শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা মন্দির আজও স্ব মহিমায় ভাস্বর। এই দুই তীর্থক্ষেত্রে তীরধান দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
জয়পুর মহাশশ্মানের সাধারণ সম্পাদক কানু দাস বলেন, ” এ বছর মহাসাধক তাঁরক গোঁসাইয়ের তিরোধান দিবসে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের আগমন ঘটবে। তাদের সেবায় পরশমণি মহাশশ্মানের স্বেচ্ছাসেবকরা ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে”।
শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের প্রচার সম্পাদক কাজল পাল বলেন, ” আগত ভক্ত অনুরাগীদের সেবা দানের জন্য মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে সকল প্রস্ততি গ্রহন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারক ধামের অন্যতম কর্ণধার পরীক্ষিত শিকদার বলেন, ‘তারক গোঁসাইয়ের জন্ম ও মৃত্যুতিথীর অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনের দাবি জানান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)