লিটারে ৪ টাকা দাম বাড়লো বোতলের সয়াবিন তেলের
বোতলের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৪৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৪৭ টাকা করা হয়েছে। আজ থেকে এ দাম কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, ভোজ্যতেল সমিতির একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক একটি বৈঠক হয়েছে। আপনারা জানেন, ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা আন্তর্জাতিক বাজার মনিটর করি। বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের যৌক্তিক নির্দেশক মূল্য ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে অবগত হই, যাতে মূল্যটা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটা বিশেষ বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। আমরা ধারণা ছিল, আমদানি করার পর দাম বাড়বে। কিন্তু দুটো সার্কুলার ছিল। একটি হচ্ছে আমদানি পর্যায়ের, আরেকটি ভোক্তা পর্যায়ের সরাসরি মিল গেট থেকে।
তিনি বলেন, এনবিআর খুবই তৎপর রাজস্ব সংগ্রহের জন্য। আমরা কিছু আলোচনা করার আগে, তেল উৎপাদনের মিলগুলোতে চিঠি চলে গেছে, ১৬ এপ্রিল থেকে যে পণ্যগুলো বের হবে, তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে পণ্য বের করতে হবে।
ইচ্ছা ছিল, একটু সময় নিয়ে এ ব্যাপারটা দেখবো। কিন্তু আসলে সেই সুযোগ ছিল না। আমরা একটু দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেছি, এ জন্য যে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সিদ্ধান্ত না দেবো, বাজারে সাপ্লাইয়ের একটা ব্যাঘাত ঘটবে। এটা যাতে না হয়, সে জন্যই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
টিটু বলেন, আমরা যখন দাম বাড়াই, সেটা তাৎক্ষণিক কার্যকর হয় কেন, এমন প্রশ্ন থাকতে পারে। আসলে মিলগেট থেকে ভ্যাট দিয়ে পণ্য বের করতে হয়। যে কারণে এখানে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার সুযোগ থাকে না আমাদের কাছে। আর আমদানি করে মিলগেটে এনে প্রসেস করতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে।
ভোজ্যতেলের নতুন দামের বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, খোলা সয়াবিন যেটা ১৪৯ টাকা ছিল লিটার, সেটা দুই টাকা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৪৭ টাকায় বিক্রি হবে। আর বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম ১৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হয়েছে। পাঁচ লিটার সয়াবিনের বোতল ৮০০ টাকা ছিল, সেটা বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুপার পাম অয়েলের দাম আগে নির্ধারণ করা ছিল না, এবার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লিটার ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বোতলের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ৪ টাকাখোলা সয়াবিনের দাম কমলেও, বোতলের সয়াবিনের দাম বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু টেকনিক্যাল কারণে খোলা সয়াবিনের দাম আমরা কমাতে পেরেছি। আর বোতল যেহেতু লেবেল করা থাকে এবং সিলড করা থাকে, ওখানে খুচরা পর্যায়ের ভ্যাট ফ্যাক্টরি পর্যায়ে আদায় করা হয়। ফলে খোলা তেলের বাজারে একটা ফ্লেক্সিবিলিটি আছে, যেটা বোতলজাত তেলের ক্ষেত্রে নেই।
তিনি বলেন, তেলের মূল্য কমানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু সব বোঝা যদি আমরা উৎপাদকের কাঁধে চাপিয়ে দিই, তাহলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে সাপ্লাই চেইনে অসুবিধা হবে। কাজেই সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সয়াবিন এ সমন্বয় করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ভোজ্য তেলের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন পর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে জারি করা এসআরওদ্বয়ের মেয়াদ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে শেষ হচ্ছে বিধায় আগামী ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখ থেকে বাজারে ভোজ্য তেল (পরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত সয়াবিন তেল) সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি পূর্ববর্তী মূল্যে পণ্য সরবরাহ হবে।’
চিঠিতে ১৬ এপ্রিল থেকে বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৩ টাকা, ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা এবং খোলা ১ লিটার পাম তেলের দাম ১৩২ টাকা প্রস্তাব করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভায় সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা গত ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা জানানো হয়।
এর কয়েকদিন পর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, বাজারে ১৬৩ টাকায় প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এবং ১৪৯ টাকায় খোলা তেল পাওয়া না গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেওয়ার পর ৮ ফেব্রুয়ারি এনবিআর আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভোজ্যতেলসহ আরও তিন পণ্যের আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দেয়। এতে স্থানীয় পর্যায়ে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন এবং ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)