‘গালি’ কেন দেন, ‘দেশ ছাড়তে বাধ্য’ কেন হয়েছিলেন- জানালেন পিনাকী ভট্টাচার্য


লোকে বলে পিনাকী গালি দেয়। আর পিনাকী বলেন—‘আমি তো আর মারতে পারি না, তাই গালি দিই।’ কেন তিনি বললেন এমন কথা? কেন দেশের এলিটদের বিরুদ্ধে তার এত ক্ষোভ? আর কী সেই অভিজ্ঞতা, যা তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল? এক অনুষ্ঠানে লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য আত্মগোপন থেকে নির্বাসনে যাওয়ার কারণ জানালেন।
শুক্রবার (২ মে) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ২০ মিনিটে অনুষ্ঠিত চ্যানেল আই-এর পর্দায় সালাম স্টিল ‘স্ট্রেট কাট’-এর আয়োজনে ভার্চুয়ালি অংশ নেন পিনাকী ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট, মানবাধিকার লঙ্ঘন—এইসব ইস্যুতে ধারালো কনটেন্ট বানান পিনাকী ভট্টাচার্য। কনটেন্টে আক্রমণাত্মক ভাষা, অশ্রাব্য ভাষা কেন ব্যবহার করেন—
অনুষ্ঠানের হোস্ট দীপ্তি চৌধুরীর এই প্রশ্নের জবাবে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশের যে দুর্দশা, এই দুর্দশার জন্য দায়ী কারা? এই দুর্দশার জন্য দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশের এলিটরা। যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে এবং যারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে—সেই শিক্ষিত শ্রেণিই বাংলাদেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে। আর সেই কারণেই বাংলাদেশের এত দুর্দশা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ কখনোই বাংলাদেশের সম্পদ কোথাও পাচার করেনি; বরং তারা বাইরে থেকে উপার্জন করে দেশে নিয়ে আসে। এরাই সেই মানুষ, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখছে। বাংলাদেশের এলিটরা অর্থনীতিতে এক ফোঁটা টাকাও কন্ট্রিবিউট করে না। বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অবদান রাখে তারাই, যারা গার্মেন্টসে মেশিন চালায়, যারা ঠেলাগাড়ি ঠেলে, যারা রিকশা চালায়, যারা শ্রমিক হিসেবে হাতুড়ি চালিয়ে বিল্ডিং তৈরি করে, যারা বাস চালায়, টেম্পু চালায়, ক্ষেতে ফসল ফলায়—তারাই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এবং এদের উৎপাদিত সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করে কারা? এলিটরা।’
পিনাকী বলেন, ‘এলিটদের তিনটা ভয়—একটা সম্মান হারানোর ভয়, একটা মার খাওয়ার ভয়, আরেকটা সম্পদ হারানোর ভয়। আমি তো আর মারতে পারব না তাদের, তাই তাদের গালি দিই। সম্মান হারানোর ভয়—এটলিস্ট এই গালির কারণে যেন তারা ঠিক থাকে। এই গালির তোড়ে যদি তারা ঠিক থাকে, তাহলে বাংলাদেশকে আমরা কিছুটা সাইজ করতে পারব। আদারওয়াইজ, এরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবনকে দাসের জীবন বানিয়ে রাখবে। এবং যারা আসলে দাসের জীবন বানিয়ে রাখছে, তাদের জন্য তো গালিই প্রাপ্য। এটাই আমার কমিউনিকেট করার রাস্তা।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পিনাকী ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হয়, কেন তিনি দেশে ছেড়েছেন, কেন তাকে পলিটিক্যাল্যাল অ্যাসাইলাম নিতে হলো? জবাবে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিল, যেদিন শহীদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হলো সেদিন আমাকে সকালে ডিজিএফআই থেকে ডাকা হলো তাদের অফিসে যাওয়ার জন্য। যিনি ফোন করেছিলেন তিনি নিজের পরিচয় দেন মেজর ফারহান বলে। ভদ্রতা করেই আমাকে বলা হয়েছিল, ডিজিএফআই অফিসে যেতে হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি সিভিলিয়ান আমাকে কেন ডিজিএফআই ডাকবে? বললো আমাদের কিছু জরুরি আলাপ আছে আপনার সাথে।’
পিনাকী জানান, দ্বিতীয় কলে রূঢ়ভাবে তাকে জানানো হয়, সেদিনই যেতে হবে এবং সন্ধ্যার আগেই তাকে ডিজিএফআই অফিসে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার বন্ধুবান্ধব এবং যাদের সাথে হিউম্যান রাইটস নিয়ে অ্যাক্টিভিজম করতাম তাদেরকে সঙ্গে কথা বললাম। উনারা সবাই বললেন আমি যেন না যাই এবং আমি যেন লুকিয়ে পড়ি। তখনই আমি লুকিয়ে পড়ি। পরদিন আমার বাসায় ডিজিএফআই রেইড করে, অফিসে রেইড করে আমি কোথায় তা জানার জন্য। আমি ৫ মাস প্রায় আত্মগোপনে ছিলাম নানা জায়গায় ঢাকা শহরেই। তারপরে নির্বাচন হয়ে গেলে তখন মনে করলাম লুকিয়ে থাকাটা অনুচিত। আমার বাসার সামনে ডিজিএফআই গার্ড বসালো, সারাক্ষণ ধরে নজরদারী এবং আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। তারপরে আমার দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া। তা না হলে তো ডিজিএফআই আমাকে ধরে নিয়ে যেত।’
পিনাকী বলেন, ‘আমরা জানি ডিজিএফআই যাদেরকে ধরে তাদের বেশিরভাগই ফেরে না। আমি ওই সময় আসলে যারা গুম হয়েছে তাদের একটা ডকুমেন্টেশন করছিলাম। সে সময় আমি জানতে পেরেছি যে যারা গুম হয় তাদেরকে ডিজিএফআই এভাবেই ডেকে নিয়ে যায়। সে যায়, সে ভিক্টিম তারপর্ আর সে কখনোই ফিরে আসে না। ন্যাচারালি তখন আমিও এটাই ভেবেছি যে আমার কপালেই সম্ভবত এটাই ঘটতে যাচ্ছে। সেজন্যই আত্মগোপনে যাওয়া এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া।’
ফ্রান্সে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে এই আ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘তখন আমি একটা ফ্রেন্স হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের সঙ্গে কাজ করতাম। তারাই আমার ভিসা পাওয়ার যাবতিয় ব্যবস্থা করে দেয় এবং এখানে আশ্রয় পাওয়ার জন্য তারা সর্বোতভাবে আমাকে সাহায্য করে।’

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
