জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও কিছু কথা
তারিক ইসলাম: স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর ২০২৪ সালে আরেকটি স্বাধীনতার স্বাদ পেল জাতি। প্রায় একমাস ব্যাপী আন্দোলন-সংগ্রাম ও শত শত তরতাজা মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো এবারের স্বাধীনতা।
ভাষা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ। এর পর স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঁকবদলের ইতিহাস। কিন্তু এবার স্বাধীনতা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান যারা দেখেননি, তারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থানকে পর্যবেক্ষণ করেছে। ছাত্রদের আন্দোলন কখনো বিফলে যায়নি। যেমনটি হয়েছিল ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়। তারা দেশ স্বাধীন করেই ঘরে ফিরেছিল।২০২৪ সালের কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম নয়।
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান-এর মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। শুধু তাই নয়, জন মানুষের ক্ষোভ ও আক্রোশের মুখে উনি দেশ থেকে পালিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এটা ছিল এক বিরল দৃষ্টান্ত। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এটাই ছিল এদেশের ইতিহাসে সব থেকে গৌরবময় ঘটনা। সব থেকে প্রথমে যে নামটি মনে পড়ছে- বীর সন্তান আবু সাঈদ। আসলেই উনি একজন মহাকাব্যের নায়ক- একজন বীরসেনা। ইতিহাসে অনেক যোদ্ধা দেখেছি; কিন্তু আবু সাঈদ এর মতো এমন অসীম সাহসী, নির্ভীক মানুষ খুব কম দেখা মেলে- যিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন শত্রুর বন্দুকের সামনে। সেদিনই বাংলাদেশের এই গৌরবগাঁথা গণঅভ্যুত্থানের সূচনা।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা মনে পড়ছে- আমেরিকার Revolutionary War এর উপর নির্মিত মুভি- Patriot এ ব্রিটিশদের দ্বারা নির্যাতিত Benjamin Martin এর ছেলে Gabriel প্রতিবাদ করেছিল কারণ তার ছোট ভাইকে ব্রিটিশ কর্নেল Tavington হত্যা করেছিলো। ঘটনাচক্রে Gabriel তার বাবার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধে যোগ দেয় ও শহীদ হয়। এই Gabriel হল সেই ঘটনার আবু সাঈদ। কারণ, আমরা যেমন দেখেছি আবু সাঈদের মৃত্যুর পরে কীভাবে পুরো দেশের ছাত্র জনতাসহ আপামর মানুষ নেমে গিয়েছিল, ঠিক তেমনি Gabriel এর মৃত্যুর পরে তার বাবা একটি Martin আঞ্চলিক একটি মুক্তিবাহিনী গঠন করেন এবং তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন দেশ ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীন করবার জন্য। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর আমরা তদ্রূপ আন্দোলন দেখেছি।
ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে এ গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছে শহরের শ্রমজীবী-মেহনতি সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, আর নানা শ্রেণি-পেশার বিক্ষুব্ধ লাখ লাখ মানুষ। যে এক-দেড় হাজার (সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি) মানুষ শহিদ হয়েছেন, তার মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাইরে শহরাঞ্চলের সর্বহারা-আধা সর্বহারা শ্রেণির মানুষের সংখ্যাই বেশি। এ মানুষদের হারানোর কিছু ছিল না। কিন্তু তাদের শত বঞ্চনা, বেকারত্ব, না খাওয়া আর মানবেতর জীবনের গ্লানি তাদের গণপ্রতিরোধ-গণঅভ্যুত্থানের কাফেলায় শামিল করেছে।
বাংলাদেশে ২০২৪-এর এ গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-তরুণদের প্রায় সমগ্র একটি প্রজন্মকে রাতারাতি বড় করে তুলেছে, করে তুলেছে দায়িত্বশীল। রংপুরের শহিদ আবু সাঈদের বীরোচিত আত্মদান হাজারো, লাখো তরুণকে জুলুম আর জালেমশাহি রাজত্বের বিরুদ্ধে দেশাত্মবোধের চেতনায় জাগিয়ে তুলেছে। তাদের অনেকের কাছে এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে শামিল হওয়ার মতো গৌরবের বিষয়। হাজার হাজার তরুণ শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ আবু সাঈদের মতো আত্মদানে গুলির মুখে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।
এ শক্তিকে কে পরাজিত করে! অভ্যুত্থানের পর তারা যেভাবে সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে, ডিবি অফিস, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানাগুলোকে পরিষ্কার করেছে, থানা থেকে শুরু করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মন্দির ও অঞ্চলগুলোকে পাহারা দিয়ে আসছে, তা দায়িত্ব ও সম্প্রীতির নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। কোমলমতি বলে যাদের ছোট করা হতো, প্রয়োজনে তারা কীভাবে অভিভাবকের ভূমিকায় আবির্ভূত হলো, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। আমাদের সব যে শেষ হয়ে যায়নি, ‘জেন জি:-এর এ প্রজন্ম তা দেশবাসীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।
লেখক: সভাপতি সাতক্ষীরা বোটানিক্যাল সোসাইটি।
Show quoted text
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)