টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া
টাইব্রেকারে এসে হেরো গেলো ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ার জালে দুটি বল প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হলো ব্রাজিলিয়ানরা। টানা দুটি ম্যাচ টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে নাম লিখলো ক্রোয়েশিয়া।
ব্রাজিলের হয়ে টাইব্রেকারে শট মিস করেন রদ্রিগো এবং মার্কুইনহোস।
আবারও ইউরোপিয়ান দলের সামনে এসে থমকে দাঁড়াতে হলো ব্রাজিলকে। ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে শুরু, এ নিয়ে পঞ্চমবার নকআউটে এসে ইউরোপিয়ান দলের কাছে হারতে হলো লাতিন আমেরিকান পাওয়ার হাউজ ব্রাজিলকে। এর মধ্যে চারবারই কোয়ার্টার ফাইনালে।
যে ক্রোয়েশিয়া এর আগে কখনোই ব্রাজিলকে হারাতে পারেনি, এবার তারা এসে বিশ্বকাপের নকআউটে হারিয়ে দিলো সেলেসাওদের। নিঃসন্দেহে ক্রোয়াটদের এই জয়ের সবচেয়ে সেরা নায়ক গোলরক্ষক লিভাকোভিচ।
পুরো ১২০ মিনিটে অসংখ্যবার ব্রাজিলকে গোলবঞ্চিত রেখেছেন তিনি। টাইব্রেকারে এসেও শুরুতে রদ্রিগোর শট ঠেকিয়ে দিয়ে ব্রাজিলের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেন তিনি।
ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে প্রথমে শট করতে আসেন নিকোলা ভ্লাসিক। তার শট ঠেকাতে পারেননি ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন।
কিন্তু ব্রাজিলের প্রথম শটটি নিতে এসে ব্যর্থ হলেন রদ্রিগো। গোলরক্ষক লিভাকোভিচ ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন।
এরপর লোভরো মাজের, ক্যাসেমিরো, লুকা মদ্রিচ, পেদ্রো, মিসলাভ ওরসিক গোল করেন দু’দলের হয়ে। ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ শটটি নিতে এসে মার্কুইনহোস বাম পাশের বারে লাগিয়ে গোল বঞ্চিত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ের আনন্দে, উল্লাসে মেতে ওঠেন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলাররা।
এ নিয়ে দুই বিশ্বকাপের নকআউটে টানা ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫টিতে টাইব্রেকারে জিতলো ক্রোয়েশিয়া।
এখনও পর্যন্ত ক্রোয়াটরা নকআউটে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ নিয়ে যাওয়া এবং টাইব্রেকারে যাওয়া পর তাদের সাফল্য প্রায় শতভাগ। তাদেরকে কেউই হারাতে পারেনি।
এবারও দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপানকে পুরো ১২০ মিনিট ঠেকিয়ে রাখার পর টাইব্রেকারে গিয়ে জিতলো ক্রোয়েশিয়া।
ম্যাচের প্রথম ৯০ মিনিট গোলশূন্য। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। খেলার ১০৫তম মিনিটে প্রায় একক প্রচেষ্টায় অসাধারণ একটি গোল করলেন নেইমার। কিন্তু তার এই গোলটি ধরে রাখতে দিলেন না পেটকোভিচ। ১১৬তম মিনিটে গোল করে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। এরপর তো টাইব্রেকার। যেখানে লিখা হলো ব্রাজিলের হতাশার গল্প এবং ক্রোয়াটদের বিজয়গাথা।
পুরো ম্যাচেই বলতে গেলে ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক ডোমিনিট লিভাকোভিক যেন ব্রাজিলিয়ানদের সামনে হিমালয় পাহাড়ের ন্যায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ানরা একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো এ সময়। কিন্তু তাদের এই ক্লান্তির দুর্বলতা দুর করে দিয়েছিলেন লিভাকোভিচ। ব্রাজিলের অসংখ্য আক্রমণ ডিফেন্ডারদের ফাঁক গলতে পারলেও গিয়ে থেমে যায় গোলরক্ষকের সামনে।
পুরো ম্যাচে দুই দলই খেলেছে সমান সমান। বল দখলের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া কোনো অংশেই কম ছিল না ব্রাজিলের চেয়ে, সমান ৫০ ভাগ করে। ব্রাজিল পাস দিয়েছে ৬৮৪টি। ক্রোয়েশিয়া দিয়েছে ৬৯৩টি। গোলমুখে ব্রাজিল শট নিয়েছে ২১টি। ক্রোয়েশিয়া নিয়েছে ৯টি। তাও অনটার্গেট ছিল কেবল ১টি। ওটাই গোল।
১৩তম মিনিটেই গোল পেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ডান পাশ থেকে জুরানোভিচ বল এগিয়ে দিলে ছোট বক্সের ভেতর দিয়ে বল যাওয়ার সময় তাতে পা লাগানোর চেষ্টা করেন প্যালাসিচ এবং পেরিসিচ। কিন্তু কেউ বলে পা লাগাতে পারেননি। গোলও হয়নি। বেঁচে যায় ব্রাজিল।
২০ মিনিটে বল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন ভিনিসিয়ুস। নেইমারের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান করে বল নিয়ে শট করেন ক্রোয়েশিয়ার জালে। কিন্তু ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে যায়। ফিরতি বলে আবারও নেইমার তিন-চারজনকে কাটিয়ে শট নেন। যদিও ছিল দুর্বল শট। গোলরক্ষকের কাছে বল।
২২ মিনিটে ক্যাসেমিরোর দুর্দান্ত শট, কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা। ৩০ মিনিটে ব্রাজিলের বক্সের সামনে থেকে দুর পাল্লার শট নেন জুরানোভিচ। কিন্তু বলটি চলে যায় ব্রাজিলের পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে।
৪০ মিনিটে বক্সের বাম পাশে রিচার্লিসনকে ফাউল করা হলে ফ্রি-কিক দেয়া হয়। কিক নেন নেইমার। অসাধারণ এক কিক নেন নেইমার। কিন্তু বল ধরে ফেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক।
৪৭তম মিনিটে ডান পাশ থেকে রাফিনহা ক্রস করেছিলেন। কিন্তু নেইমার এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েও পারেনি বলটি ক্রোয়েশিয়ার জালে জড়াতে। ফিরতি বলে আবারও ভিনিসিয়ুস থেকে নেইমার বল পেয়েছিলেন। কিন্তু রিচার্লিসন অফসাইড হয়ে যান।
৫৫তম মিনিটে বাম পাশে দানিলো বল এগিয়ে দেন নেইমারকে। কয়েকজনকে কাটিয়ে অসাধারণ এক শট নেন তিনি। কিন্তু গোলরক্ষক বলটি ধরে ফেলেন।
৫৬ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে ডান পাশে পাস দেন অ্যান্টোনি। বক্সের শেষ প্রান্ত থেকে ক্রস করেন রিচার্লিসন। কিন্তু ডিফেন্ডাররা রক্ষা করায় গোল থেকে বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।
৬৬ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে পাকুয়েতা অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক অসাধারণ দক্ষতায় বলটি ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বলেও গোলের চেষ্টা করেছিলো ব্রাজিল। কিন্তু ডিফেন্সে গিয়ে বল ফিরে আসে।
৭৬তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় এবারও বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।
৮০ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে বল পেয়ে লুকাস পাকুয়েতা বাম পায়ের দারুণ এক কিক নিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও গোলরক্ষক বাঁচিয়ে দিলেন ক্রোয়েশিয়াকে।
৮২তম মিনিটে রদ্রিাগোর কাছ থেকে বল পেয়ে রিচার্লিসন হেড করেন। কিন্তু বল চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ৮৬তম মিনিটেও দারুণ এক সুযোগ নষ্ট হয় ব্রাজিলের। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার।
১০০তম মিনিটে থিয়াগো সিলভার ক্রস থেকে বাইসাইকেল কিক দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন অ্যান্টোনি। কিন্তু শটটাও ঠিক হয়নি। তবুও গোলে বল গিয়েছিলো। কিন্তু গোলরক্ষক লিভাকোভিচের হাতে বল।
১০২ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ব্রোজোভিচের শটটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।
১০৫ মিনিটে নেইমারের গোল মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে ওয়ান-টু করে এগিয়ে যান। শেষ টাচটা দেন লুকাস পাকুয়েতা। সর্বশেষ গোলরক্ষ লিভাকোভিককে কাটিয়ে ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন নেইমার।
১০৮ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। দারুণ একটি আক্রমণ করলেও ফিনিশারের অভাবে গোল হলো না।
তবে ১১৬তম মিনিটে এসে সফল হলো ক্রোয়েশিয়া। এ সময় এসে লিড ধরে রাখতে পারলো না ব্রাজিল। মিস্লাভ ওরসিকের পাস থেকে বল পেয়ে ব্রুনো পেটকোভিচের দুর্দান্ত এক শট জড়িয়ে যায় ব্রাজিলের জালে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)