দেশে খেলাপি ঋণ এখন ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা


চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বা নন পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ৭৪,৫৭০ কোটি টাকা বেড়েছে। এর ফলে মার্চ ২০২৫ শেষে ব্যাংকখাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ।
রোববার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এর আগের প্রান্তিকে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বেড়েছে। হার বেড়েছে ৩.৯৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খেলাপি ঋণের কোনো তথ্য আমরা লুকিয়ে রাখব না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এটা আদায় জোরদারের মাধ্যমে কমানো হবে। নতুন করে বিতরণ করা ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য বিভিন্ন আইনি কঠোরতা আনার কথা জানান তিনি।
ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ শ্রেণিকরণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে। পাশাপাশি আগের সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যেসব শীর্ষ গ্রুপের মন্দ ঋণ গোপন ছিল— সেগুলোর অনেকটাই এখন শ্রেণিকরণের আওতায় আসায়, খেলাপি ঋণের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে।
বিগত সরকারের সময় ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাংকখাতে খেলাপি স্থিতিশীল ছিল। ২০১২ সালে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০১১ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ওই এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় ২০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। ওই বছরেই হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ঋণ খেলাপি হতে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ার কারণেও অনেকে খেলাপি হয়ে পড়েন। ফার্মার্স ব্যাংকেও জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। এর প্রভাবে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়।
২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে ৪০ হাজার কোটি টাকার ঘরে নেমে এলেও—২০১৪ সালে আবার বেড়ে প্রথমবারের মতো অর্ধলক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করে। ওই বছরে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সামান্য বাড়ে। কিন্তু, ২০১৬ সালে বেড়ে ৬২ হাজার ১৭০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ব্যাংকে আর খেলাপি ঋণ বাড়বে না, কমবে। তিনি হিসাবের মারপ্যাঁচের মাধ্যমে খেলাপি কমাতে পারেননি। ২০২০ সালে যা সামান্য কমে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকায় নামে। এর আগে ২০১৯ সালে খেলাপি ছিল ৯৪ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম খেলাপি ঋণ— লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ওই বছরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এরপর আর লাখের নিচে নামেনি খেলাপি ঋণ। ২০২৩ সালে তা বেড়ে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত জুনে তা আরও বেড়ে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
