নড়াইলের মধুমতী সেতু চালু হওয়ায় নৌকার মাঝিরা বেকার, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়
নড়াইলের মধুমতী সেতু চালু হওয়ায় নৌকার মাঝিরা বেকার হয়ে পড়েছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন শঙ্কায়। নড়াইলের লোহাগড়ার কালনা ঘাটে মধুমতী সেতু হওয়ায় নৌকা পারাপার নেই। নিজের নৌকার পাশে মলিনমুখে বসে আছেন নাসির মোল্লা।
তকদীর মোল্লা (৫৬) প্রায় ৪০ বছর ধরে নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতী নদীর কালনা ঘাটে নৌকা পারাপর করে আসছিলেন।
তিনি জানান, বাপ-দাদার পেশাও ছিল এটি। সম্প্রতি মধুমতী সেতু চালু হওয়ায় তকদীরসহ আরও অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। এখন সংসার কীভাবে চালাবেন, তা নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়।
লোহাগড়ার চরকালনা গ্রামের বাসিন্দা তকদীর মোল্লা। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি তাঁর পুরোনো ইঞ্জিনচালিত নৌকাটির ইঞ্জিন খুলে ফেলেছেন। নৌকাটি তিনি ভেঙে ফেলবেন। নৌকার কাঠ জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করার কথা ভাবছেন। তকদীর মোল্লা বলেন, নৌকা পারাপার করে খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন তাঁর ৮০০-১০০০ টাকা থাকত। এর ওপর চলত সংসার। চার ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে। এখন ভাবছেন সংসার চালাতে কার্গো জাহাজে চাকরিতে যাবেন।
সুরুজ মোল্লার (৫৫) নেই জমিজমা। তিনিও প্রায় ৩৫ বছর ধরে নৌকা পারাপারের পেশায় ছিলেন। তাঁর ছয় সদস্যের সংসার চালানো নিয়ে এখন দিশাহারা। কী করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। নাসির মোল্লা (৩৪) ঘাটে নৌকার পাশে মলিনমুখে বসে ছিলেন। শিশুকাল থেকে নৌকা চালিয়ে সংসারের খরচ জোগান দিতেন তিনি। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন শঙ্কায় পড়েছেন। একই অবস্থা বাদশা মিয়ার, তবিবর রহমান ও ওবায়দুর শেখসহ অন্যদের।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘাট এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ অক্টোবর মধুমতী সেতু চালু হওয়ার পর থেকে তাঁরা বেকার হয়ে পড়েছেন। যাঁদের পুরোনো নৌকা ছিল, তা ভেঙে ফেলছেন। অন্য নৌকাগুলো সারি সারি ঘাটে বাঁধা। যুগ যুগ ধরে এ পেশায় তাঁদের পরিবারের লোকজন। এর অধিকাংশই মধুমতী নদীর ঘাট এলাকার দুই পারের বাসিন্দা। এ ঘাটে ৪৮টি নৌকা সার্বক্ষণিক নৌকা পারাপারে নিয়োজিত ছিল। এ পেশায় জড়িত ছিলেন তাঁদের পরিবারের লোকজন।
নৌকায় শুধু ঘাট পারাপারের কাজেই নয়, নদীতে বিনোদনের জন্য বা বনভোজন করতে অনেকে ভাড়া নিতেন। প্রশাসনও কাজে লাগাত এসব নৌকা। সেতু হওয়ায় এখন এ পেশা ছাড়তে হচ্ছে তাঁদের।
বাদশা মিয়া ও তবিবর রহমানসহ বেশ কয়েকজন জানালেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়ে প্রথম যেদিন এ ঘাট দিয়ে নড়াইল এসেছিলেন, সেদিন লাখো জনতা ঘাটে অপেক্ষা করছিল। মাশরাফি ও তাঁর সঙ্গীদের তাঁরা নৌকায় করে পার করে দিয়েছিলেন। এখন তাঁর কাছে ও সরকারের কাছে দাবি, মধুমতী সেতুর নিচে অনেক জায়গা, এখানে একটি সুন্দর পার্ক (বিনোদন কেন্দ্র) স্থাপন করা হোক। তাহলে ঘাটের নৌকার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র দোকানিরা বেঁচে থাকতে পারবেন।
ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন মধুমতী সেতু চালুর পর থেকে লোকজন সেখানে আসছেন। ভবিষ্যতেও মানুষ সেতুটি দেখতে আসবেন। সেখানে পার্ক থাকলে এলাকার গরিব মানুষের নানাভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা আরও জানান, সেতুর পাশে ফেরিঘাটকে কেন্দ্র করে খাবার হোটেল, মুদি দোকান ও চায়ের দোকানসহ ৫২টি ক্ষুদ্র দোকান গড়ে উঠেছিল। এখন অধিকাংশ দোকানই বন্ধ হয়ে গেছে।
যুবক হাবিল মোল্লা চা, পান ও বিস্কুট বিক্রি করতেন। এর ওপরই চলত তাঁর সংসার। খাবার হোটেল চালাতেন বাবলু শেখ (৪২)। তাঁর হোটেলও সেতু উদ্বোধনের পর থেকে বন্ধ আছে। বাবলু শেখ বলেন, সেতুর নিচে ও পাশে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের ভালো পরিবেশ আছে। সরকারি বা বেসরকারিভাবে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে তাঁদের মতো বেকার হয়ে পড়া মানুষের একটা উপায় হতো। এলাকার মানুষও বিনোদন সুবিধা পেত।
নৌকা শ্রমিকেরা জানালেন, মধুমতী সেতু উদ্বোধনের পর রাতে মাশরাফি বিন মুর্তজা সেতু দিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। তখন নৌকা শ্রমিকেরা সেতুতে তাঁকে আটকিয়ে তাঁর কাছে কর্মসংস্থান ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান। মাশরাফি বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এর আগে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, ঘাট-সংলগ্ন কালনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। সেটি হলে ঘাট এলাকার মানুষের নানাভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ধীরে ধীরে বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে উঠবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)