পরীমনি কাঠগড়ায় ৪২ মিনিট, ৪ দিনের রিমান্ড, মামলা ডিবিতে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানি চলাকালে ৪২ মিনিট তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় তাকে চিন্তিত দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাকে হাজির করা হয়। এরপর তাকে আদালতের কাঠগড়ায় রাখা হয়। পরীমনি এজলাসে আসার সাথে সাথে তার এক আইনজীবী তাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন।
রাত ৮টা ৩১ মিনিটে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ এজলাসে ওঠেন। এরপর পরীমনির পক্ষে আদালতে লড়তে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কে পরীমনির পক্ষে ওকালতনামা দেবেন তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। একপর্যায়ে রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
এজলাস ত্যাগের আগে আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘আগে আপনারা ঠিক করেন, কে আসামির আইনজীবী হবেন। তারপর শুনানি হবে।’
এরপর পরীমনি ঈশারা করে আইনজীবী নিলঞ্জনা রিফাতকে তার আইনজীবী নিয়োগ করেন।
৮টা ৫৩ মিনিটে আবার এজলাসে আসেন ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ। এরপর তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের পুরো সময় পরীমনি চুপচাপ ছিলেন। রাত ৯টা ৮ মিনিটের দিকে তাকে আদালত থেকে বের করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে র্যাব সদরদফতর থেকে কালো একটি মাইক্রোবাসে পরীমনিকে বনানী থানায় নেয়া হয়। পরে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। বনানী থানায় র্যাব বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে।
বুধবার বিকেলে পরীমনির বনানীর বাসায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে যায় র্যাবের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। তাদের দেখে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভ শুরু করেন পরীমনি। তিনি সেখানে অভিযোগ করেন, তার বাসায় ‘বিভিন্ন পোশাকে’ লোকজন এসে ফ্ল্যাটের দরজা খুলতে বলছেন। কিন্তু তিনি দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান শেষে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে র্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার কথা জানায় র্যাব।
পরীমনি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছেন। কিছুদিন আগে ঢাকার সাভারের বোটক্লাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই ঘটনায় কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিলেন, তারা আবার জামিনও পেয়েছেন। এর মধ্যেই আবার একাধিক ক্লাবে পরীমনির ভাঙচুরের অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।
পরীমনি-রাজের মামলা ডিবিতে
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি এবং আলোচিত প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে র্যাবের করা পৃথক মাদক মামলা তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের পৃথক দুটি মামলা ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পরীমনি ও রাজকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বলেন, মাদকের দুটি মামলা ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া রাজের পর্নোগ্রাফির একটি মামলা আমাদের কাছে আছে। সেটি তদন্তে কাজ চলছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে আলোচিত নায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে র্যাব বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে র্যাব সদরদফতর থেকে কালো একটি মাইক্রোবাসে তাদের বনানী থানায় নেয়া হয়। পরে তাদের বনানী থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। তার বাসায় একটি মিনি বারও রয়েছে। তিনি বাসায় নিয়মিত মদের পার্টি করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ পরীমনির বাসায় এসব মাদক সাপ্লাই (সরবরাহ) করতেন।
তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনসিদ্ধ পদ্ধতিতে পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়, যা একটি লাইসেন্সে কাভার করে না। পাশাপাশি তার বাসায় লাইসেন্সের একটি কপি পেয়েছি। তবে তা আইনসিদ্ধ নয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)