মনিরামপুরে একসঙ্গে মানুষ-মৌমাছির বসবাস
হেলাল উদ্দিন : বাড়িটি ঘিরে রেখেছে মৌমাছি। বারান্দাসহ চারপাশে অন্তত ২৩টি মৌমাছির বড় বড় চাক। এসব মৌমাছি বছরের আট মাস ধরে থাকে বাড়িটিতে। বাড়িটি এখন এলাকায় মৌমাছির বাড়ি হিসেবে পরিচিত। কেউ মৌমাছি দেখতে আবার কেউবা ছবি তুলতে যান বাড়িটিতে। পরিবারের সদস্যদের মতোই মানুষের সঙ্গে বসবাস করছে মৌমাছি। প্রাকৃতিকভাবে বনের মৌমাছি আর পরিবারটির সদস্যদের মাঝে এই ভালোবাসার বন্ধন গড়ে উঠেছে ছয় বছর আগে।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শেখপাড়া খানপুর গ্রামের ইসাহক আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন। বাড়িতে সন্তানের মতো লালন-পালন করছেন মৌমাছির ২৩টি দলকে। পরিবারটির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে কয়েক লাখ মৌমাছি।
চাষি আলমগীর হোসেন বলেন- ছয় বছর আগে হঠাৎ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে সাত-আটটি মৌমাছির চাক এসে হাজির হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই নির্দিষ্ট সময়ে মৌমাছির দলগুলো বাড়িতে চলে আসে। দ্বিতলবিশিষ্ট বাড়ির বেলকনি, দেওয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে চাক তৈরি করে। প্রতিবছরই এই মৌমাছির দলের আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর এসেছে ২৩টি মৌমাছির দল। আমাদের পরিবারেরই অংশ তারা।
তিনি আরও বলেন- মৌমাছির সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা মিশে গেছে। আমার বাবা বেশির ভাগ সময় তাদের দেখাশোনা করে। তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কি না দেখে, আমিও দেখি। তা ছাড়া আমার মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অন্যরাও তাদের দেখভাল করে। বছরের নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত মৌমাছির দলগুলো বাড়িতে থাকে। এরপর একদিন হঠাৎ করে সব চলে যায়। তখন মনটা খুব খারাপ লাগে। অপেক্ষায় থাকি আবার কবে মৌমাছিগুলো ফিরে আসবে। ঠিক নির্দিষ্ট সময়ে আবারও চলে আসে মৌমাছিগুলো। এভাবে চলছে গত ছয় বছর। আট মাসে দুইবার মৌমাছির চাক থেকে মধু সংগ্রহ করি। বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মধু বিক্রি হয়।
আলমগীরের ফুফু আছিয়া খাতুন বলেন- প্রথম দিকে কামড়ানোর ভয় পেলেও এখন ভয় লাগে না। কেননা মৌমাছি আমাদের কাউকে আক্রমণ করে না। কামড়ায়ও না।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন- এটি মেইলি সিরা প্রজাতির মৌমাছি। এই মৌমাছিগুলো প্রকৃতি ও পরিবেশ বোঝে। যেখানে নিরাপত্তা, বাঁচার পরিবেশ ও খাবারের ভালো সুব্যবস্থা পায় সেখানেই মূলত তারা বাসা বাঁধে। এগুলো সুন্দরবনের মৌমাছি। এক বছর যেখানে বাসা বাঁধে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর চলে যাওয়ার সময় সেখানে কিছু আলামত রেখে যায়। পরের বছর সেখানেই ফিরে আসে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)