যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ পরিহার করুণ : জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ, স্যাংশন ও সংঘাতের পথ পরিহারে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, বিশ্ব নেতাদের কাছে আমার আবেদন, আসুন যুদ্ধ, স্যাংশন ও সংঘাতের পথ পরিহার করি এবং আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি।
রোহিঙ্গা সংকটের ওপর আলোকপাত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।
শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তবে, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তেমনি এটি সঙ্কটের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থিক চাহিদা মেটাতেও সক্ষম নয়।
তিনি বলেন, আজ এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো আমাদের জরুরিভাবে প্রয়োজন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তা ছাড়া, জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমার মা, আমার তিন ছোট ভাই, দুই ভ্রাতৃবধূ, চাচাসহ পরিবারের মোট আঠার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। আমার ছোট বোন এবং আমি বিদেশে থাকায় সেই বর্বরতা থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। এর আগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ত্রিশ লাখ দেশবাসীকে হত্যা করা হয়, দুই লাখ নারী নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যুত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার কারণে মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে তা অনুভব করতে পারি।
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২২ মিনিটে তিনি ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভাষণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সপ্তদশ বারের মতো ইউএনজিএ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।
এ বছরের ইউএনজিএর মূল প্রতিপাদ্য, ‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা: সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্বের লক্ষ্যে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ত্বরান্বিতকরণ পদক্ষেপ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন ও অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন এবং সেখানে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন সফর শেষ করে তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখানে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবেন এবং অবশেষে ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)