কলারোয়ায় সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা
শীত ইতোমধ্যেই ছড়িয়েছে সকালের দূর্বায়, গ্রামের দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ সেজেছে হলুদ সরিষা ফুলে। মধু সংগ্রহের ব্যস্ততায় মৌমাছিদের গুঞ্জনে মুখরিত বিস্তীর্ণ সরিষা রাজ্য। পৌষ মাসে হিমেল বাতাস সরিষা ক্ষেত ছুঁয়ে মন মাতানো গন্ধ পৌঁছে দিচ্ছে লোকালয়ে! সেই গন্ধ যেমন সবাইকে আকৃষ্ট করছে, তেমনই বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি।
সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার ফসলের মাঠগুলোর বর্তমান চিত্র এমনই।
দেশের প্রধান তৈল জাতীয় ফসলের নাম সরিষা। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা গাছগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠার পাশাপাশি সুস্থ-সবলও রয়েছে। আর এ কারণেই চলতি বছর বাড়তি ফলন আশা করছেন এ এলাকার কৃষকেরা।
কৃষকেরা জানান, গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় তারা এবার উন্নত জাতের সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
অন্যদিকে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রত্যেক সরিষা চাষি অধিক মুনাফা করবেন বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলা সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
কৃষকরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৯/১০, সরিষা-১৫, সোনালি সরিষা (এসএস-৭৫) ও স্থানীয় টরে-৭ আবাদ করেছেন।
জানা যায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকেরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছিলেন। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ “বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট” উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
উপজেলার পিছলাপোল গ্রামের সরিষা চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
কলাটুপি গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছি। ফলন ভালো ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকেই ঝুঁকে পড়বে।
উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের কৃষক বুরান জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষার জমিতে ধানের আবাদও ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা “লাভের ফসল” হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
তারা বলেন, “বারি-১৪ সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই এ জাতের সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করি এবং বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছো । তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সরিষার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।”
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)