আজ ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস
১৯৭১ সালের এই দিনে যশোর হানাদার মুক্ত হয়েছিল। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে যশোর জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোরের চৌগাছা উপজেলার সলুয়া বাজারে অগ্রবর্তী ঘাঁটি তৈরি করে হানাদার বাহিনী। এ সময় যশোর সেনানিবাসের তিন দিকেই মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে।
প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। এ তিন দিন যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাকিস্তানি বাহিনীদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালাতে শুরু করে। এ দিন সকাল ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রচণ্ড লড়াই হয়। বিকালেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝতে পারে, যশোর দুর্গ আর কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়।
বেনাপোল অঞ্চলে দায়িত্বরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসকে নওয়াপাড়ার দিকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন ব্রিগেডিয়ার হায়াত। আর নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনি পালিয়ে যান খুলনার দিকে। পালানোর সময় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকালে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাস দখল করে।
যশোর সেনানিবাস এলাকায় হানাদারদের হাতে নিহত শহীদদের কঙ্কাল দাফনের প্রস্তুতি যশোর সেনানিবাস এলাকায় হানাদারদের আক্রমণে শহীদদের কঙ্কাল দাফনের প্রস্তুতি সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘যশোর গেজেটিয়ার’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৬ তারিখ সন্ধ্যা হতে না হতেই পাকবাহিনীর সবাই যশোর ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।
৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর ও মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোরে প্রবেশ করেন। তখনও তারা জানতেন না যে, যশোর ক্যান্টনমেন্ট শূন্য। তারা বিস্মিত হন কোনও প্রতিরোধ না দেখে।
জীবিত থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যশোর জেলার সাবেক কমান্ডার রাজেক আহমদ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘৬ ডিসেম্বরেই আমরা যশোর শহর থেকে শত্রু সেনাদের বিতাড়িত করি। কিন্তু সেদিন যশোর শহর ছিল জনশূন্য। ফলে পরদিন ৭ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল বের হয়।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হতো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও ইতিহাসবিদদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১০ সাল থেকে ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ৮ ডিসেম্বর যশোর শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় মুক্তিবাহিনী। ১০ ডিসেম্বর যশোরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওয়ালিউল ইসলাম। ১১ ডিসেম্বর টাউন হল মাঠে জনসভা হয়।
সেখানে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অফিস-আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় ১২ ডিসেম্বর।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের উপ-প্রধান এবং বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বলেন, ২ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী যশোরের সীমান্ত চৌগাছা ও শার্শায় অবস্থান নেয়। ৩-৪ ও ৫ ডিসেম্বর সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মিত্র বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধারা ও অংশ নেন। ৫ ডিসেম্বর লড়াই তীব্র আকার ধারণ করে। মুহুর্মুহু বোমা ও বিমান হামলা হয়। রাতে বহুদূর থেকে চৌগাছা সীমান্ত এলাকায় আগুনের গোলা দেখা যায়। ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য খুলনার দিকে রওনা হয়। ওই দিনই যশোর মুক্ত হয়।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস। ১১ ডিসেম্বর যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে স্বাধীন বাংলায় প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে যশোরে জেলা প্রশাসন স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে সকালে টাউন হলমাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরিয়ে শহরের বকুলতলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)