মুজিব জন্মশত বর্ষ
একজন ডিজিএমের হাত ধরে অভাবনীয় সাফল্যে কলারোয়ার পল্লী বিদ্যুৎ
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পল্লী বিদ্যুত অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত বছর থেকে চলতি সময় পর্যন্ত একের পর এক কর্মযজ্ঞতা চালিয়ে গ্রাহকের সুবিধার্থে।
ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌছানের চেষ্টা যেমন অব্যাহত আছে তেমনি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে দুই স্থান থেকে জাতীয় গ্রিড সংযোগ তথা ডুয়েল ৩৩ কেভি বিদ্যুত লাইনের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে কলারোয়া বিদ্যুত লাইনের। ফলে স্থানীয় লাইন রক্ষণাবেক্ষন কিংবা কোন জরুরী প্রয়োজনে বিদ্যুত সংযোগ সাময়িক বন্ধ রাখা ব্যতিত লোডশেডিং নেই। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে মানীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে গৃহহীন-ভূমিহীনদের জন্য নবনির্মত গৃহে ইতোমধ্যে জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যুত সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। নির্ধারিত জায়গায় কলারোয়ায় বিদ্যুতের নতুন উপকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। হয়রানী বন্ধে দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বিদ্যুত সংযোগের জন্য অনলাইন আবেদন সিস্টেম চালু হয়েছে। এছাড়া উপজেলাব্যাপি জোরকদমে চলছে বিদ্যুতের নতুন খুটি ও তার সংস্থাপনের কাজও। আর এসব-ই সম্ভবপর ও তরান্বিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কলারোয়া পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজর (ডিজিএম) প্রকৌশলী মো.নুরুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর উদ্যোগে।
ডিজিএম প্রকৌশলী মো.নুরুল ইসলাম জানান, ‘কলারোয়ার বিদ্যুত আগে সাতক্ষীরা গ্রিড সোর্স লাইনে ছিলো। বর্তমানে সেটার সাথে যশোরের বেনাপোলের ৩৩ কেভি গ্রিড থেকেও সংযুক্ত হয়েছে। ফলে যেকোন একটি লাই ফেল করলে আরেকটা গ্রিড বা ৩৩ কেভি থেকে লাইন চালু অব্যাহত থাকবে। এক কথায় কলারোয়ার বিদ্যুত লাইন বর্তমানে ডুয়েল ৩৩ কেভি গ্রিডে সংযুক্ত।’
তিঁনি বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম আর প্রতীক্ষার পর চলতি বছরের ১০জানুয়ারী বেনাপোল গ্রীড থেকে নতুন ৩৩ কেভি ফিডারের মাধ্যমে কলারোয়া উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।’
তিঁনি আরো বলেন, ‘কলারোয়াবাসীর সুবিধার্থে ইতোমধ্যে জোনাল অফিসের জন্য নতুন উপকেন্দ্র-৩ উপজেলার কাজিরহাট এলাকায় নির্ধারিত জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে। এই উপকেন্দ্রটি নির্মান হলে কলারোয়াবাসী আরো বেশি নিরবিচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য তথা সাস্টেনেবল ও রিলায়্যবল বিদ্যুৎ পাবেন।’
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুত সমিতির প্রধান কার্যালয় তালার পাটকেলঘাটায়। বছর কয়েক আগ পর্যন্ত এর অধীনে ছিলো কলারোয়া। যেকোন প্রয়োজনে গ্রাহকদের ছুটতে হতো সেখানে। পরবর্তীতে ছিলো সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গায় সাব-জোনাল অফিসের অধীনে। বছর তিনেক আগে কলারোয়ায় প্রথমে সাব-জোনাল অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। জনগুরুত্বপূর্ণ ও নানান প্রয়োজনের দাবিতে গেলো বছর সাব-জোনাল অফিস থেকে জোনাল অফিসে উন্নীত হয় কলারোয়ার পল্লী বিদ্যুত অফিস।
কলারোয়ার জোনাল অফিসের প্রথম ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) পদে পদায়ন হয়ে আসেন নড়াইলের ছেলে প্রকৌশলী মো.নুরুল ইসলাম। ২০১৯ সালে কলারোয়ায় যোগ দেন তিঁনি। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল-ই) বিভাগ প্রকৌশলী ডিগ্রি অর্জন করেন মো.নুরুল ইসলাম। ২০১০ সালে চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে কর্মনিষ্ঠায় প্রশংসিত হয়েছেন সবখানে। কলারোয়ায় যোগদানের আগে ছিলেন গাজীপুরে।
ডিজিএম প্রকৌশলী মো.নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কলারোয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বলে কিছু নেই বা থাকবে না। জরুরী রক্ষণাবেক্ষণ কাজ কিংবা বিদ্যুতের ত্রুটিবিচ্যুতি প্রক্রিয়ার কারণে মাঝেমধ্যে লাইন সাময়িক ক্ষনিকের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। যেমন কোথাও শর্টসার্কিট, অগ্নিকান্ড কিংবা অন্যকোন অপ্রত্যাশিত কারণে কিছু সময়ের জন্য হয়তো বিদ্যুত লাইন বন্ধা রাখা লাগতে পারে, তবে কোনভাবেই জাতীয় পর্যায়ে ৩৩কেভি গ্রিডের লাইনের মাধ্যমে লোডশেডিং হবে না ইনশাল্লাহ।’
তিঁনি বলেন, ‘এখন থেকে সকল শ্রেণীর বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন অনলাইন সিস্টেমে করতে হবে। আবেদনের কোনো প্রকার হার্ড কপি নেওয়া হবে না। বিদ্যুত সংযোগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত, হয়রানীমুক্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।’
কোন দালালের খপ্পরে না পড়তে সকলের প্রতি আহবান জানান তিঁনি।
একনজরে বিগত এক বছরে কলারোয়া জোনাল অফিসের বেশ কিছু অর্জন-
১৩২/৩৩ কেভি গ্রীড: ডুয়েল সোর্স সুবিধা :
কলারোয়া উপজেলায় জানুয়ারী’ ২১ হতে বেনাপোল গ্রীড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা গ্রীড উপকেন্দ্র বিকল্প হিসেবে আছে। ফলে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল যে কোন একটি গ্রীডে সমস্যা হলেও কলারোয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। এই সুবিধা সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে কেবল কলারোয়া উপজেলায় করা হয়েছে।
৩৩ কেভি সোর্স লাইন:
কলারোয়া উপজেলার জন্য বেনাপোল গ্রীড উপকেন্দ্র হতে একটি নতুন ৩৩ কেভি সোর্স লাইন নির্মাণ করে চালু করা হয়েছে। সাতক্ষীরা গ্রীডের ৩৩ কেভি লাইনটি বিকল্প হিসেবে আছে। যেকোন একটি লাইনে ফল্ট হলে ৫/১০ মিনিটের মধ্যে অন্য লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র:
কলারোয়া উপজেলায় দুইটি উপকেন্দ্র হতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কলারোয়া-২ উপকেন্দ্রটি অভারলোড হওয়াতে ইতিমধ্যে এর ক্ষমতা ১০ এমভিএ হতে ২০ এমভিএ তে উন্নিত করা হয়েছে।
এছাড়া কাজিরহাটে নতুন একটি উপ-কেন্দ্রের জন্য জমি ক্রয় করা হয়েছে। দ্রুতই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
১১ কেভি ফিডার:
কলারোয়া উপজেলায় ৭টি ১১কেভি ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। যার কারণে একটি ফিডার বন্ধ হলে অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিহীন থাকতো। বর্তমানে ১৪টি ১১কেভি ফিডার করা হয়েছে। ফলে প্রতিটি ফিডারের মাধ্যমে ছোট ছোট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
এক্সপ্রেস লাইন কাভার তার:
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসের জন্য একটি এক্সপ্রেস লাইন কাভার তার দ্বারা করা হয়েছে। এই লাইনটিতে ফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
ডুয়েল সোর্স লাইন:
উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেক্সের জন্য ডুয়েল সোর্স লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
আপগ্রেডেশন কাজ:
বিদ্যমান লাইনের জরাজীর্ণ তার, খুটি, ক্রসআর্ম পরিবর্তন করে লাইন আপগ্রেডেশন করা হয়েছে।
স্বচ্ছতা:
সকল ধরনের নতুন সংযোগের আবেদন অনলাইনে গ্রহন করা হচ্ছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। গ্রাহক হয়রানি দুর করতে অফিসকে দালাল মুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মতবিনিময় সভা/উঠান বৈঠক করা হচ্ছে নিয়মিত।
কলারোয়া পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম প্রকৌশলী মো.নুরুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে লোডশেডিং নেই এবং সাটডাউনের শিডিউলও নেই। প্রাকৃতিক দুযোর্গ আর কিছু রক্ষনাবেক্ষন কাজ ছাড়া আশা করছি সব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। তবে উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সময় পূর্ব থেকে ঘোষনা দিয়ে লাইন বন্ধ করা হয়ে থাকে।’
সকল শ্রেণীর বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন অনলাইন সিস্টেমে করার আহবান জানিয়ে তিঁনি সকলের অবগতিতে দু’টি লিংক উল্লেখ করে দিয়েছেন। সেগুলো হলো- আবাসিক/বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অনলাইন আবেদন লিংক:
http://www.rebpbs.com এবং শিল্প/সেচ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অনলাইন আবেদন লিংক: http://industry.rebpbs.com
ছবিতে..
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)