আশুরার ফজিলত
হিজরি সনের ১২ মাসের মধ্যে পবিত্রতার চাদরে ঢাকা চারটি মাসের অন্যতম মহররম। ১০ মহররম বা আশুরার রোজা হজরত মুসা (আ.)সহ আরও অনেক নবী-রসুলের আমলে ছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসেও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পেলেন, ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখছে। তিনি রোজা রাখার কারণ জানলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, ‘মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ইহুদিদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। সুতরাং তোমরাও আশুরায় রোজা রাখ। তবে তাদের অনুকরণ বা সাদৃশ্য যেন না হয় সে জন্য তিনি আগের কিংবা পরের এক দিন রোজা পালনের কথাও বলেছেন। দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসে রোজা ফরজ হয়। তার আগে মুসলমানদের জন্য আশুরার রোজা ছিল ফরজ বা বাধ্যতামূলক। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজার পর আশুরার রোজা সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যে কোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম বলে ঘোষিত হয়েছে হাদিসে। হজরত রুবাইয়্যেই বিনতে মুআ’ওয়েয (রা.) বর্ণনা করেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন সকালে আনসারি সাহাবাগণের গ্রামগুলোতে দূত পাঠিয়ে ঘোষণা দিতে বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে কিছু খেয়ে ফেলেছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে পূর্ণ করে। আর যে ব্যক্তি না খেয়ে আছে সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। তিনি (রুবাইয়্যেই) বলেন, ‘এরপর আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোজা রাখাতাম। আর তাদের তুলা দ্বারা বানানো খেলনা দিতাম। যখন তাদের কেউ খানার জন্য কাঁদত তখন ইফতারি পর্যন্ত ওই খেলনা দিয়ে রাখতাম।’ (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে অসংখ্য নবী-রসুলের স্মৃতি ধারণ করছে আশুরার দিনটি। বিভিন্ন নবী-রসুলের শরিয়তে এ দিনটি বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। হিজরি ৬১ সনের কারবালা প্রান্তরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণ করলে মুসলমানদের কাছে ঐতিহাসিকভাবে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে ওঠে। সব নবী-রসুল আশুরার দিনটিকে ইবাদতের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আশুরার দিন চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস এগারো বার পড়বে, আল্লাহ তার ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তার জন্য একটি নূরের মিম্বর তৈরি করবেন (নুজহাতুল মাজালিস)। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার উসিলায় আল্লাহতায়ালা অতীতের এক বছরের ছোট-বড় সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। হজরত হাফছা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) চারটি আমল কখনো ছাড়েননি। যথা-১. আশুরার রোজা। ২. জিলহজের প্রথম ১০ দিনের রোজা। ৩. প্রতি মাসে তিনটি রোজা। ৪. ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখবে, তার বিগত বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে এর সঙ্গে নয় অথবা ১১ তারিখে রোজা রাখাও মুস্তাহাব। হজরত শিবলি (রা.) প্রথম থেকে ১০ মহররম পর্যন্ত চার রাকাত নামাজ পড়তেন। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস ১৫ বার পড়তেন এবং সালামের পর এর ছাওয়াব ইমাম হুসাইন (রা.)-এর রুহে প্রেরণ করতেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন, ইমাম হুসাইন (রা.) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, জনাব! আমার অপরাধ কী? উত্তরে বলেন, অপরাধ নয়, আমার নেত্রদ্বয় তোমার অনুগ্রহে লজ্জিত। কিয়ামত দিবসে যতক্ষণ পর্যন্ত এর বিনিময় তোমাকে শোধ করতে পারব না ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার দিকে তাকাব না (জাওয়াহেরে গায়বি)।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)