নড়াইলের বাদাম বিক্রেতা প্রতিবন্ধী সজীব বিশ্বাস জীবন সংগ্রামে সৈনিকের নাম
নড়াইলের বাদাম বিক্রেতা প্রতিবন্ধী সজীব বিশ্বাস জীবন সংগ্রামে সৈনিকের নাম। জীবন সংগ্রামে এক লড়াকু সৈনিকের নাম প্রতিবন্ধী সজীব বিশ্বাস (৩১)। দীর্ঘ ১৬টি বছর ধরে তিনি বাদাম বিক্রি করে যাচ্ছেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে।
সজীব বিশ্বাস প্রতিবন্ধী তবুও বসে নেই, তিনি বাদামের ডালা গলায় ঝুলিয়ে বাদাম বিক্রি করেই চলেছে দিনের পর দিন। প্রতিবন্ধী সজীব বিশ্বাস লোহাগড়া পৌরসভার কুন্দশী মালোপাড়া গ্রামের শুবদেব বিশ্বাসের ছেলে।
আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়, জানান, সজীব বাদামের ডালা গলায় ঝুলিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, অফিস চত্বর ও হাট-বাজারে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে যাচ্ছে। প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। আর ওই লাভের টাকা দিয়েই সন্ধ্যায় চালসহ বাজার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। বর্তমানে সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় বাদাম বিক্রির টাকা দিয়ে মাকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
বাদাম বিক্রেতা প্রতিবন্ধী সজীব বিশ্বাস বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে বাদাম বিক্রি করে আমার সংসার চলছে। রৌদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি উপজেলার এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে যায় বাদাম বিক্রির জন্য। অথচ একটুও আরাম-আয়েশের চিন্তা করি না আমি। শুধু সংসারের চিন্তা এটাই যে মাকে নিয়ে একটু সুখে থাকা।
তিনি আরও বলেন, আমি বাদাম বিক্রি করেই সুখে আছি। আমি এক জন প্রতিবন্দ্ধী। আমি বিবাহ করি নাই। আমি আমার মাকে একটু সুখে রাখার জন্য এ বাদাম বিক্রি করি। আমরা দুই ভাই তিন বোন। তিন বোনকে বিবাহ দেয়া হয়েছে। বড় ভাই পৃথক তার ছেলে-মেযে নিয়ে আলাদা খায়। আমার বড় ভাইও শারিরীকভাবে অসুস্থ। কাজ কর্ম করতে পারে না ছেলে-মেয়ে খুব কষ্টে আছে। আমি সবার ছোট। আমি মাকে নিয়ে এক সংসারে আছি। মাকে নিয়ে এই সংসার টানতেই ১৬ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করে যাচ্ছি। এদিকে প্রতি মাসে আমার ও মায়ের প্রচুর টাকার ওষুধ কিনতে হয়।
বাদাম ক্রেতা প্রসাদ গাইন, বিবেক, বিজয়, লোকমান মোল্যা বলেন, তিনি সারাদিন ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করেও তার চোখে- মুখে এতোটুকু ক্লান্তির ছাপ নেই। বাদাম বিক্রি করার জন্য তাকে বাদাম বাদাম বলে চিৎকার করতে হয় না। ভালো বাদাম বিক্রি করেন তিনি। তাই ক্রেতার অভাব হয় না। আমি প্রতিদিন তার কাছ থেকে বাদাম কিনি। আমার মতো আরও অনেকেই তার কাছ থেকে বাদাম কেনেন।
ছেলেকে সাহায্য করে কিনা সজীবের মায়ের কাছে জানতে চাইলে তার মা বলেন, আমার ছেলেকে সবসময় সাহায্য করি। আমি বাদাম ভেজে দেই আর আমার ছেলে সজীব বিশ্বাস লোহাগড়া শহরে সারা দিন ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করে। আমরা দুইজনই পরিশ্রম করি একটু সুখে থাকার আশায়। লোহাগড়া বাজার স্বর্নকার বিপুল বলেন, প্রতিবন্ধী সজীব বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে বাদাম বিক্রি করছেন। আমি তার কাছ থেকে প্রতিদিন বাদাম কিনে খাই এবং ছেলে-মেয়েদের জন্য বাড়িতে কিনে নিয়ে যায়। তার বাদাম গুলো খুব ভাল মানের।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)