মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছে ফিলিস্তিন-জর্ডান-মিশর
গাজার একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে হামলার ঘটনায় অন্তত ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ওই হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বুধবারের অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক বাতিল করেছেন আরব নেতারা। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের তেল আবিব সফর বাতিল হয়নি। খবর বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, জর্ডান সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত ‘উভয় পক্ষের সম্মতির’ ভিত্তিতে হয়েছে।
ইসরায়েল সফর শেষে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে যাওয়ার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে গাজার হাসপাতালে হামলার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি ‘সমবেদনা’ জানিয়েছেন বাইডেন। জন কিরবি জানিয়েছেন, ইসরায়েল সফরে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
মঙ্গলবার রাতে গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজায় হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি যুদ্ধাপরাধ। হাসপাতালটি শত শত আহত ও অসুস্থ মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল। হাসপাতালটি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতাল নামেও পরিচিত ছিল। এটি একই সঙ্গে যুদ্ধে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের আশ্রয়স্থল এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পর পশ্চিম তীরের শহরগুলোতে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এদিকে হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির মহাপরিচালক এক্স নেটওয়ার্কে এক পোস্টে এ নিন্দা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহায্য সংস্থা মেডগ্লোবালের জাহের সাহলুল এ হামলাকে কোনো চিকিৎসা স্থাপনায় ২১ শতকের সবচেয়ে বাজে আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। নিন্দা জানিয়েছে মিশর এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোও।
এদিকে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক একে ‘গণহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি খ্রিষ্টান মিশনারিদের পরিচালিত একটি হাসপাতাল, যার সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
আল আহলি আরব হাসপাতাল থেকে যে ভিডিও পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে চারিদিকে বিশৃঙ্খলা। রক্তাক্ত অবস্থায় হতাহতদের স্ট্রেচারে করে অন্ধকারের মধ্যেই বের করে আনা হচ্ছে। হাসপাতালের বাইরে ধ্বংসস্তূপ, রাস্তায় পড়ে আছে মৃতদেহ আর বিধ্বস্ত যানবাহন।
ওই হাসপাতালে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস সেখানে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
বেইজিংয়ে এক ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই আহ্বান জানান। ওই ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও উপস্থিত ছিলেন। ওই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, তারা হাসপাতালগুলোকে টার্গেট করছে না। পরে আইডিএফের প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, অপারেশনাল ও ইন্টেলিজেন্স ব্যবস্থাপনা খুঁটিয়ে দেখে আর জিজ্ঞাসাবাদের পর এটা স্পষ্ট যে, আইডিএফ গাজার হাসপাতালে হামলা চালায়নি।
তার দাবি, ইসলামিক জিহাদের ছোঁড়া রকেটই হাসপাতালে আঘাত হেনেছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে তারা সে সময় গাজা শহরের আশপাশে কোনো কার্যক্রম চালায়নি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)