মৎস্যচাষে সাফল্যের উদাহরণ আব্দুল হালিম


সেলিম হায়দার: খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা সবসময়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লবণাক্ততার সঙ্গে লড়াই করে। এই কঠিন পরিবেশেই শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম দেখিয়েছেন কীভাবে ধৈর্য ও সঠিক প্রশিক্ষণ মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।
একসময় হালিম জীবিকা নির্বাহ করতেন কপোতাক্ষ নদে বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করে। কঠোর পরিশ্রমের তুলনায় আয় ছিল খুবই কম। পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হতো। জীবনের উন্নতির আশা থেকে তিনি নদীভাঙনের পাশে জমি কেটে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায় রোগব্যাধি, খারাপ পানি ব্যবস্থাপনা ও ভুল পদ্ধতির কারণে তিনি প্রথম বছরেই বড় ক্ষতির মুখে পড়েন।
২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আমফান তাঁর জীবনে আরও বড় দুর্দশা নিয়ে আসে। ঘের ভেসে যায়, মাছ নষ্ট হয়, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সব হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ঠিক তখনই পাশে দাঁড়ায় সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) ও আরএমটিপি প্রকল্প পিকেএসএফ, ইফাদ ও ডানিডা সহযোগিতায় আধা-নিবিড় মাছ চাষ, পানি ব্যবস্থাপনা, খাবার সরবরাহ, রোগ প্রতিরোধসহ আধুনিক পদ্ধতিতে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ঘের সংস্কার ও পোনা কেনার জন্য দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা।
প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর হালিম ঘের ব্যবস্থাপনায় নিয়ম মেনে কাজ শুরু করেন। বাগদা ও গলদার পাশাপাশি তেলাপিয়া, পাইকা ও রুইসহ সাদা মাছের মিশ্র চাষ করেন। এতে ঝুঁকি কমে এবং আয় বাড়ে। বর্তমানে তাঁর ৩ বিঘা ঘেরে প্রতি মৌসুমে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় হয়। তিনি এখন এলাকার সফল চাষিদের একজন এবং ৩–৪ জনকে কর্মসংস্থানের সুযোগও দিয়েছেন।
সাসের নির্বাহী পরিচালক শেখ ইমান আলী বলেন, “উপকূলের মানুষের জীবন সবসময়ই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে থাকে। আমরা চাই এই অঞ্চলের চাষিরা আধুনিক জ্ঞান, সঠিক প্রযুক্তি আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাক। আব্দুল হালিমের মতো একজন চাষি যখন ঘুরে দাঁড়ায়, তখন সেটা শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো এলাকার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে আরও অনেক মানুষকে দক্ষ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। উপকূলের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে মৎস্যচাষ এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত, আর আমরা সেই পথেই কাজ করছি।”
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার বলেন, “কয়রার ভৌগোলিক পরিবেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনায় এখানে চিংড়ি ও সাদা মাছের অসাধারণ উৎপাদন হয়েছে । আব্দুল হালিম তার বাস্তব উদাহরণ। সাসের আরএমটিপি প্রকল্পের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি নিয়ম মেনে চাষ করে দেখিয়েছেন যে আধা-নিবিড় পদ্ধতি, পানি ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধ ঠিকমতো অনুসরণ করলে লাভ নিশ্চিত।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, “আমাদের এলাকায় অনেক মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু আব্দুল হালিম প্রমাণ করেছে যে চেষ্টা থাকলে আবারও উঠে দাঁড়ানো যায়। সাস ও আরএমটিপির সহায়তায় তিনি নিজের ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। তার সাফল্য অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ

তালায় নিরাপদ ও সুপেয় পানির জন্য পিএসএফ সংষ্কারে আলোচনা সভা
শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা: নিরাপদ ও সুপেয় পানির জন্য পিএসএফ সংষ্কারেরবিস্তারিত পড়ুন

তালায় যুবদল–স্বেচ্ছাসেবক দল–ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণ
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীতবিস্তারিত পড়ুন

তালায় তিন বছরের শিশুর পুকুরে ডুবে মৃ*ত্যু
তালা ( সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার হাজরাকাটি গ্রামে তিন বছরেরবিস্তারিত পড়ুন

